সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা: কয়লা পাচারকাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সিবিআইয়ের সক্রিয়তার পিছনে বিজেপির ইন্ধন দেখছে তৃণমূল। কান টানলে মাথা আসবে! পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি। তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে একযোগে তৃণমূল ও বিজেপিকে নিশানা করেছে বাম-কংগ্রেস।


কয়লা পাচার মামলার তদন্তে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী এবং শ্যালিকাকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই নিয়ে তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘আমি তো আগেই বলেছিলাম, টাকা কোথায় যায় না যায়...কান টানলে মাথা আসবেই, এবার যা করার সিবিআই করুক ৷’’


পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বিজেপির উচিত বাপের ব্যাটার মত সামনে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে, বাড়ির মা-বোনকে টেনে নিয়ে মোকাবিলা নয়, বিজেপি কাপুরুষ, তাই সিবিআই-ইডিকে এভাবে ব্যবহার করছে ৷’’


গত কয়েকমাস ধরেই গরু পাচারের পাশাপাশি কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে সক্রিয় সিবিআই। তা নিয়ে লাগাতার তৃণমূলকে নিশানা করছে বিজেপি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে গত ২ ফেব্রুয়ারি, বারুইপুরের সভায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে নাম না করে তাঁর স্ত্রী-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘কয়লা লালার টাকা কোথায় কোথায় যায়? থাইল্যান্ডে যায়, ব্যাঙ্ককে যায়, বোর্ড দেখাল - গত লোকসভা ভোটে কলকাতায় এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিলেন যিনি - তিনিই হলেন ম্যাডাম নারুলা ৷’’


ঠিক ৪ দিনের মাথায় শুভেন্দু অধিকারীর ঘরের মাঠ কাঁথিতে গিয়ে কড়া প্রত্যুত্তর দেন অভিষেক। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখন আবার আমার সঙ্গে না লড়াই করে আমার বৌকে টার্গেট করেছে, কী বলছে? বলছে আমার বৌয়ের নাকি এখানে অ্যাকাউন্ট আছে, ওখানে অ্যাকাউন্ট আছে। ভাই আমার বৌয়ের কলকাতা ছাড়া আর কোথাও অ্যাকাউন্ট নেই। আরে আমি তো সমস্ত তথ্য-পরিসংখ্যান সামনে রেখে দিয়েছি, কী বলছে, আমার বউ নাকি এয়ারপোর্টে সোনা নিয়ে ধরা পড়েছিল, তো এয়ারপোর্টে সিআইএসএফ কী নাকে নস্যি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল? ৫০০ সিসিটিভি আছে, ছবি প্রকাশ্যে আনছে না কেন?’’


এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে সিবিআই নোটিস দেওয়ার পর ফের একবার সুর চড়ান শুভেন্দু। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। এদিকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘‘অভিষেক অমিত শাহর বিরুদ্ধে মামলা করেছে, আগামিকাল কোর্টে অমিত শাহর হাজিরা দেওয়ার কথা, তার আগে কুৎসা করা হল, সিবিআইকে ব্যবহার করছে ৷’’


অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, ‘‘যখনই তদন্ত হয় তখন বলে পলিটিক্যাল ভেনডেটা, আর যখন তদন্ত বন্ধ থাকে তখন বলে মোদি-দিদি আঁতাঁত, আমরা চাই সত্য সামনে আসুক ৷’’


এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল-বিজেপি, দু’দলের বিরুদ্ধেই সরব বাম-কংগ্রেস। সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘টিএমসি-বিজেপির মধ্যে সবে খেলা শুরু হয়েছে, তবে বেশি দূর যাবে না, যেমন পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে কিছু হয়নি, টিএমসি-বিজেপির বোঝাপড়া এটা ৷’’ 


২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে সামনে এসেছিল নারদ স্টিং ফুটেজ। তা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্য-রাজনীতিতে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কয়লা পাচারের তদন্তে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী-কে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। বঙ্গ ভোটের আগে রাজনৈতিক সংঘাতে যা অন্য মাত্রা যোগ করেছে।