সোমনাথ মিত্র, হুগলি : ইডির ( ED ) হেফাজতে অনুব্রত মণ্ডলের ( Anubrata Mondal ) দিল্লি-যাত্রার পরই, সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ছবি। যেখানে এক ব্য়ক্তিকে বাজারে মাছ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই তাঁকে অনুব্রত মণ্ডল বলে ভুল করছেন। কিন্তু, তিনি আসলে কেষ্ট নন । বরং অতি সাধারণ এক ছাপোষা ব্যক্তি। মাছ বিক্রি করে চালান সংসার।
গরু পাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডল রাঘব বোয়াল কিনা, সেটা বোঝা যাবে তদন্তের শেষে। তবে শোনা যায়, একসময়ে বোয়াল, মাগুর নিয়েই না কি ছিল তাঁর কারবার! মাছের ব্য়বসা থেকেই নাকি তাঁর উত্থান! আর তিনি ইডি-র হেফাজতে দিল্লি যাওয়ার পরই আচমকা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে একটা ছবি! মাছের বাজারে বসা এক ব্য়ক্তি। ঠোঁটের ওপর মোটা গোঁফ। হঠাৎ দেখলে অনুব্রত মণ্ডল বলে ভুল হতেই পারে! কিন্ত, ঠিক ভুল না দেখে, অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন এই ছবি! কিন্তু, সত্য়িটা হল এই ব্য়ক্তি এক্কেবারেই অনুব্রত মণ্ডল নন! তিনি শ্য়াওড়াফুলি বাজারের মাছ বিক্রেতা সুকুমার হালদার। ঠিক ভুল না দেখে, তাঁকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় যে প্রচার চলছে, তাতে অত্য়ন্ত বিরক্ত খেটে খাওয়া সুকুমার।
আরও পড়ুন :
মাত্র ৪ বছরে ধাপে ধাপে জমা পড়েছে ২০ কোটি টাকা ! অনুব্রতর এই নগদের দিকেই নজর ED র
মাছ বিক্রেতা সুকুমার হালদার! ৩০ বছর ধরে এখানেই মাছ বিক্রি করছেন! একসময়ে নিজের বাড়ি ছিল। কিন্তু, ঋণের দায়ে তা বিক্রি করতে বাধ্য় হয়েছেন! এখন মাছ বিক্রি করেই কোনওমতে সংসার চলে। তাঁকে অনুব্রত মণ্ডল বলে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার বা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর তুলনায় অত্য়ন্ত বিড়ম্বনায় পড়েছেন মাছ বিক্রেতা সুকুমার। সত্য়াসত্য়টুকু বিচার না করে, যাঁরা এভাবে তাঁর ছবি ছড়াচ্ছেন, তাঁদের প্রতি অত্য়ন্ত ক্ষুব্ধ তিনি।
সুকুমার হালদার এই মিম নিয়ে কার্যত বেশ বিড়ম্বনায়। শেওড়াফুলি বাজারের অনেক ক্রেতাই তাঁকে এখন এই নিয়ে নানা কথা বলছেন। মজা করছেন। তিনি জানালেন, ' অনেকে জিজ্ঞেস করছে। সামাজিক সম্মানহানি। কেউ ছবি তুলে ভাইরাল করবে এটা ঠিক নয়। জঘন্য় অপরাধ। কষ্ট করে ব্য়বসা করি। '
সুকুমার হালদারের ডান পায়ে অপারেশন হয়েছে। পা মুড়ে বসতে অসুবিধা হয়। কিন্তু, কাজ না করলে খাবেন কী! তাই পা ছড়িয়ে বসেও মাছ বিক্রি করেন! সেই মানুষটাকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় এমন মিথ্য়া প্রচারে বিরক্ত স্ত্রী-ও। সুকুমারের স্ত্রী শুক্লা হালদার বললেন, 'খাওয়া ঘুম চলে গেছে। দুটো পয়সা রোজগার করে। কষ্টে দিন চলে। অন্য়ায় করেছে।'
শেওড়াফুলি বাজারের অপর এক ব্যবসায়ী ব্রজ সাহা বললেন, ' এটা আমার মোবাইলেও পাঠিয়েছে। এটা নিয়ে সবাই মজা করছে। এটা ঠিক নয়। উনি খুব পরিশ্রম করেন। '
দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত মণ্ডলের দাপটে একসময়ে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত। কিন্তু, সেই অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে চেহারার সাদৃশ্য়ই এখন সুকুমার হালদারের মতো খেটে খাওয়া মানুষের কাছে, সোশাল মিডিয়ার সৌজন্য়ে বিড়ম্বনার কারণ!