কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিতে বড়, ছোট, মাঝারি, একাধিক নেতার নাম জড়িয়েছে। কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই আবহে দলের দুই যুবনেতা, কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করল তৃণমূল। দুর্নীতির সঙ্গে কোনও ভাবে আপসের প্রশ্ন নেই বলেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন উঠছে। বিরোধীদের মতে, রাঘববোয়ালদের বাঁচাতেই কুন্তল-শান্তনুর মতো চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে নজর ঘোরানো হচ্ছে। 


মঙ্গলবার হুগলিতে তৃণমূলের যুব কংগ্রেস নেতা কুন্তল এবং সেখানে জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনুকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। কুন্তলের ক্ষেত্রে যাও বা ৫২ দিনের সময় নেওয়া হল, শান্তনুকে গ্রেফতারির পাঁচ দিনের মাথায় দল থেকে বহিষ্কার করল দল।  রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং ব্রাত্য বসু এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানান। শশী বলেন, "তৃণমূল কোনও দুর্নীতিকে বরদাস্ত করবে না। কোনও রকম আপস করা হবে না। আমাদের পদাধিকারী, নির্বাচিত প্রতিনিধি বা তাঁর আত্মীয় যদি যুক্ত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা কড়া ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা বিগত দিনে, আপনারা দেখেছেন। শান্তনু এবং কুন্তলকে অপসারিত করা হল।"


নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল থেকে সর্বপ্রথম গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর, তৃণমূলে দুই নম্বর নেতা ছিলেন তিনি। দলের মহাসচিব পদে থাকার পাশাপাশি পরিষদীয় মন্ত্রী ছিলেন। যে সময়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই সময় রাজ্য শিক্ষা দফতরের দায়িত্বও ছিল তাঁর হাতে। দুর্নীতির তদন্তে কোটি কোটি টাকা, গহনা সামনে আসার পর মন্ত্রিত্ব থেকে পার্থকে সরানো হয়। দল থেকে করা হয় সাসপেন্ড। কিন্তু তৃণমূল থেকে আজও বহিষ্কৃত হননি তিনি। পলাশীপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকেও বহিষ্কৃত করেনি তৃণমূল। 


আরও পড়ুন: SSC Case: কেষ্ট-মানিকে নীরব, শান্তনু-কুন্তলে সরব, তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত দুই যুবনেতা


তাই কুন্তল এবং শান্তনুকে দল থেকে বহিষ্কার করার এমন তৎপরতা কেন উঠছে প্রশ্ন। কোনও রকম রাখঢাক না করেই সরাসরি মমতা এবং কালীঘাটের দিকে আঙুল তুলেছেন বিজেপি-র নেতা রাহুল সিনহা। তাঁর কথায়, " "শান্তনু-কুন্তলকে নিয়ে কালীঘাটের কোনও বিপদ নেই, এটা বুঝতে পেরেছে। দেড় মাস সময় লাগল কুন্তলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এই দেড় মাসে ভাল করে দেখা হল, কুন্তলের মাধ্যমে কালীঘাটে টাকা এসেছিল কিনা। যখন বুঝতে পারল, ওদের খেলাটা নিচুস্তরে ছিল, বহিষ্কার করা হল কুন্তল-শান্তনুকে। আর যাঁর কাছ থেকে ৫০ কোটির বেশি পাওয়া গেল, তিনি শুধুমাত্র সাসপেন্ড হলেন। এতেি বোঝা যায় দলের দৃষ্টিকোণটা কেমন।"


সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়িও বলেন, "প্রশ্ন তো স্বাভাবিক! দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কার করতে হলে, তৃণমূলের গোটা দলটিকেই বহিষ্কার করতে হবে। এমন কোনও নেতা নেই দলে, যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। যাঁরা ধরে ধরে লুটেরা বানিয়েছে, তাদের কী হবে? একসঙ্গে ওঠা বসা, বাডি়তে যাতায়াত, পাড়া থেকে তুলে এনে যুব তৃণমূলের নেতা বানানো হয়েছে, তাদের কী হবে। আর এই বহিষ্কারের কোনও মূল্য আছে?"


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, " "এইগুলো কিছু নয়, বাংলার মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে মুক্তি পেতে ছোটখাটো কিছু রাজনৈতিক ঘুষ দেওয়া হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে যে, দিদি কত সৎ। কিন্তু কারও যদি ক্যান্সার হয়, তার ক্ষতে ব্যান্ডএইড লাগিয়ে লাভ হয় না। দিদির দল দুর্নীতির ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেখানে এদের তাড়িয়ে লাভ হবে না। দিদির খোকাবাবুকে তাড়ানো উচিত আগে।"