আশাবুল হোসেন, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও অনির্বাণ বিশ্বাস,কলকাতা: বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) শপথ নিয়ে জট অব্যাহত। বাবুলের অনুরোধে সাড়া দিলেন না রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। তাঁর বক্তব্য, "গণমাধ্যমে স্পিকারকে দিয়ে শপথবাক্য পাঠ করানোর অনুরোধ গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে এহেন অনুরোধ সংবিধানের পরিপন্থী।"
শপথগ্রহণের জট কাটাতে সম্প্রতি নিজেই উদ্যোগী হন তৃণমূল (TMC) নেতা বাবুল। টুইটার মারফত ধনকড়কে অনুরোধ করে তিনি লেখেন, "সুব্রত মখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর থেকে বালিগঞ্জ বিধায়ক শূন্য। শপথবাক্য পাঠ করাতে দয়া করে স্পিকারকে অনুমতি দিন, ‘যাতে আমি কাজ শুরু করতে পারি।" কিন্তু বাবুলের এই অনুরোধ ফিরিয়ে দিলেন ধনকড়।
বাবুলের শপথ গিরে তরজা অব্যাহত
বালিগঞ্জ থেকে সদ্য জয়ী হয়েছেন বাবুল। কিন্তু তাঁর শপথ গ্রহণ নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। যদিও সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার। সাংবিধানিক রীতি লঙ্ঘন করা উচিত নয় রাজ্যপালের, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ।
গত ১৬ এপ্রিল বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু চলতি মাস শেষ হয়ে গেলেও বিধায়ক পদে শপথ নিতে পারেননি বালিগঞ্জের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী। মাঝে প্রথা মেনে শপথগ্রহণের অনুমতি চেয়ে পরিষদীয় দফতরের তরফে রাজ্যপালকে দু’বার চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু পাল্টা নোট পাঠিয়ে রাজ্যপাল জানান, বিধানসভা সংক্রান্ত কিছু বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে তথ্য চেয়েও তিনি পাননি।
এই টানাপোড়েনের মধ্যে শনিবার সংবিধানের ১৮৮ নম্বর ধারা উল্লেখ করে জগদীপ ধনকড় ট্যুইট করে জানান যে, বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে জয়ী প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে শপথবাক্য পাঠ করাবেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার।
রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত তুঙ্গে
এই টানাপোড়েনে রাজ্যপালকে একহাত নেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের সংবিধানের রীতি লঙ্ঘন করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই টানাপোড়েনে বাবুল জানান, ছেলেকে শপথ নিতে দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু এই ঝামেলার মধ্যে তা না দেখেই আমেরিকা চলে যেতে হল তাঁকে। বিমানের হাতে শপথবাক্য পাঠ করতে পারলে ভাল হত বলেও জানান তিনি।
এর আগে, খড়দা, শান্তিপুর, দিনহাটা ও গোসাবা--এই চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও জয়ী প্রার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করানোর জন্য ডেপুটি স্পিকারকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিষদীয় দফতর থেকে সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হলে, মত পরিবর্তন করেন রাজ্যপাল। শেষে ৪ নবনির্বাচিত বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করান অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, স্পিকার থাকা সত্ত্বেও কেন ডেপুটি স্পিকারকে শপথবাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব দিচ্ছেন রাজ্যপাল? রাজনৈতিক মহলের ধারনা, এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যপাল এবং বিধানসভার স্পিকারের মধ্যে বারবার তৈরি হওয়া সংঘাত। এ বছরের ২৫ জানুয়ারি, বিধানসভা চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে বেনজির সংঘাতে জড়ান রাজ্যপাল ও স্পিকার। চলতি মাসের ১৪ তারিখেও সংবিধানের প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তীতেও তৈরি হয় সংঘাতের পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন: Arjun Singh: "ললিপপ দেখিয়ে লাভ হবে না'' দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি অর্জুনের
যদিও এই ইস্যুতে রাজ্যপালের পাশেই দাঁড়িয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমাদের তো প্রোটেম স্পিকার শপথ করিয়েছিল। আর কেশিয়ারিতে আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা তো জিতেও চারবছর ধরে শপথ নিতে পারেনি। উল্টে মিথ্যে কেস দিয়েছে ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছে। ভাতাটুকুও পায়নি। রাজ্যপাল নিজের কাজ করছেন।"