কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: অসুখের মধ্যে সুখের দিশা দেখিয়েছে বিশ্বস্ত বন্ধু বই। করোনা, লকডাউনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বই বিক্রি। আনন্দ পাবলিশার্সের পরিসংখ্যান বলছে, গতবছরের তুলনায় এবার বই বিক্রি বেড়েছে প্রায় তিরিশ শতাংশ। ইতিবাচক ছবি অন্য প্রকাশনা সংস্থাতেও।



শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলতেন, বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ-কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়। সেকথা যে কতটা সত্যি, তা আবারও দেখিয়ে দিল এই অতিমারী পরিস্থিতি। করোনার প্রথম ঢেউ, দ্বিতীয় ঢেউ, লকডাউন। সব মিলিয়ে এক দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে, মানুষকে সবথেকে বেশি অক্সিজেন জোগাল সেই বইয়ের পাতা। 


তাই তো আনন্দ পাবলিশার্সের পরিসংখ্যান বলছে, গতবছরের তুলনায় এবার বই বিক্রি বেড়েছে প্রায় তিরিশ শতাংশ। OTT’র সুবাদে ফেলুদা, ব্যোমকেশ, শবরের মতো গোয়েন্দারা এখন হাতের মুঠোয়। তবু, তাদের গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিযানের শরিক হতে পাঠক মজেছে বইয়ের পাতাতেই। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই বিক্রি হয়েছে দেদারে। 


তবে বেস্ট সেলার জন্মশতবর্ষে পা দেওয়া সত্যজিৎ রায়। পাঠকের অন্যতম পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অমর্ত্য সেনের বইও। লকডাউনের পর, সার্বিকভাবে বই বিক্রি বাড়ার এই পরিসংখ্যান বলছে, মোবাইল, কম্পিউটারের যুগেও, বই এবং পাঠকের বন্ধুত্বে আজও ধুলো পড়েনি।


আনন্দ পাবলিশার্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্র জানাচ্ছেন, তিরিশ শতাংশ বেড়েছে। হয়তো, অবসর বেশি পেয়েছে। বাড়িতে থাকছে। এর ফলে বই পড়া বেড়েছে। আনন্দ পাবলিশার্সের পাশাপাশি প্রায় একইরকম বই বিক্রি বেড়েছে অন্য প্রকাশনা সংস্থারও।


ছোটবেলায় বই পড়ার অভ্যাসের কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘ছেলেবেলায় একধার হইতে বই পড়িয়া যাইতাম, যাহা বুঝিতাম এবং যাহা বুঝিতাম না, দুই–ই আমাদের মনের উপর কাজ করিয়া যাইত।’


দু’মলাটের মাঝের দুনিয়াটা এরকমই। সেখানে ডুব দিলে নিমেষে উধাও হয়ে যায় মন খারাপ। তাই তো লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও, বই খোঁজা থামেনি। অনলাইন, সোশাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে ঠিক প্রকাশকের কাছে পৌঁছে গেছেন পাঠক। 


মিত্র ও ঘোষের প্রধান উপদেষ্টা সবিতেন্দ্রনাথ রায় বলছেন, দোকান বন্ধ থাকার সময় ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতাম। সেখান থেকে প্রচুর সাড়া পাওয়া গেছে। বইয়ের মধ্যে মুক্তি খুঁজে পাচ্ছে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছিলেন, বইয়ের মত এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই।


কিন্তু, ইন্টারনেট গেমিং, OTT’র রমরমার যুগে মাঝে মাঝে প্রশ্ন ওঠে, সেই বন্ধুত্ব কি একইরকম আছে? 
করোনা এবং লকডাউন-পরবর্তী সময়ে বই বিক্রির পরিসংখ্যান বলে দিল, এই সম্পর্ক চিরকালীন।