হিন্দোল দে, আবীর দত্ত ও রুমা পাল, কলকাতা: দমবন্ধ হয়ে আসার কথা উল্লেখ করে শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু তাঁর এই পদত্যাগ, সামনে এনে দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে দমবন্ধ করে বসে থাকা এক অধ্যাপকের প্রশ্ন। 


‘দুষ্টু লোক? ভ্যানিশ’। সালটা ২০১২। ভাইরাল হওয়া এই কার্টুন ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। প্রথমে নিগ্রহের অভিযোগ। তারপর গ্রেফতার এবং শেষে জেলে রাত্রিবাস করতে হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। 


এখানেই শেষ নয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, কার্টুনে ‘ভ্যানিশ’ কথাটি লিখে আসলে তাঁকে দুনিয়া থেকেই ভ্যানিশ করে দেওয়া, অর্থাত্‍ মেরে ফেলার বার্তা ছড়ানো হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ ফলে বিষয়টি আর সামান্য কার্টুন থাকেনি মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের কাছে৷ গোটা ব্যাপারটিকে সাইবার ক্রাইম বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ 


কিন্তু কার্টুনে যে তিনটি চরিত্র ছিল, তার মধ্যে মুকুল রায় অনেক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছেড়েছেন দীনেশ ত্রিবেদী। 


কথায় বলে, ভাগ্যের চাকা থেমে থাকে না! কিন্তু কার্টুন ফরোয়ার্ড করে জেলে যাওয়া অম্বিকেশ মহাপাত্রর মামলার চাকা সেই ২০১২ থেকেই থেমে! এখনও নিয়মিত আলিপুর আদালতে হাজিরা দিতে হয় তাঁকে।


এখন অম্বিকেশ জানতে চান, এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের অবস্থানটা ঠিক কী? তিনি বলেন, যে তিনটে মুখ, একজন বিজেপিতে। একজন গতকাল সংসদে দাঁড়িয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের কাছে জানতে চাই অবস্থান কী? তথ্যপ্রযুক্তি আইন ভ্যানিশ হয়ে গেছে। এখনও আমাকে এই মামলায় হাজিরা দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অবস্থানটা কী জানতে চাই।


এ নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, খুব খারাপ করেছে। নক্কারজনক। ওনার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত। মামলা তুলে নেওয়া উচিত।


যদিও শাসকদল নিজের অবস্থানে অনড়। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ছেড়ে চলে গেলে মামলা উঠে যায় নাকি? যে অপরাধ করেছে তার মামলা থাকে। দোষ করলে বিচার হবে।


তৃণমূল কংগ্রেসের পদত্যাগী রাজ্যসভার সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, অম্বিকেশ দুষ্টু বলেছিল তো? এটার একটাই কারণ অহঙ্কার। রাবণ দুর্যোধন ও কংস। ওদের অনেক ক্ষমতা ছিল। অহঙ্কার ছিল। সেটাই কারণ পতনের। রেসপেক্ট থাকা উচিত। মান সম্মান অপমান দেখা উচিত।


সামনেই আরেকটা ভোট! তার আগে ফের উস্কে গেল কার্টুনকাণ্ডের স্মৃতি!