কলকাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত ছারখার হচ্ছে দেশ। দেশজুড়ে হাসপাতালে বেডের অভাবের ভুরিভুরি অভিযোগ উঠছে।  অভিযোগ উঠছে অক্সিজেনের আকাল নিয়েও। 


করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়েই যখন এই অবস্থা, তখন আতঙ্ক আরও বেড়েছে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ বা থার্ড ওয়েভ আছড়ে পড়ার আশঙ্কায়। 


ভারতে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়েছে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ।  তারপর একসময় দৈনিক সংক্রমণ চার লক্ষের গণ্ডিও পেরিয়ে যায়। 


তবে গত কয়েকদিনে সংক্রমণের সংখ্যা ২ লক্ষের নীচে নেমে এলেও, দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ঘোরাফেরা করছে ৪ হাজারের আশেপাশেই।


ইতিমধ্যেই জাপান, হংকং-য়ের মতো দেশগুলিতে শুরু হয়ে গিয়েছে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ। জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, স্পেন, কানাডার মতো দেশ আবার করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ কাটিয়ে ওঠার মুখে। 


ভারতে বর্তমানে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শীঘ্রই ভারতে আঘাত হানতে চলেছে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ! বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  ভারতে করোনা সংক্রমণের থার্ড ওয়েভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কবে তা আছড়ে পড়বে, বা তার ভয়াবহতা কতটা হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।


সংক্রমাক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বলেন, থার্ড ওয়েভ কবে আসবে সেটা নিশ্চিত করে না বলা গেলেও, সেটা অবশ্যাম্ভবী। এটা হবেই। ভ্যাকশিনেশন করলেও এই ভাইরাসটা যেহেতু বুদ্ধিমান, তা মিউটেড করবে।


বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল আশিস মান্না বলেন, ঢেউ তো প্যান্ডেমিকে একটার পর একটা ওঠে। সেকেন্ড ওয়েভ যাবে, থার্ড ওয়েভ আসবে। এটা এমন জিনিস যে আটকানো যাবে না। সামলানোর জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।


করোনা সংক্রমণের থার্ড ওয়েভ আছড়ে পড়লে পরিস্থিতি কি আরও ভয়াবহ হবে? তৃতীয় ঢেউয়ের থেকে বাঁচার উপায় কী?  
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ-- মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো প্রাথমিক কোভিড বিধি গুলো মেনে তো চলতেই হবে। পাশাপাশি জোর দিতে হবে ভ্যাকসিনেশনের ওপর। 


যত দ্রুত সম্ভব দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে, ততই কমবে করোনা আক্রান্তের জীবনের ঝুঁকি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হবে কোভিড চিকিত্‍সার পরিকাঠামো। 


ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ রক্তিম গুহ বলেন, পরিকাঠামো ও ভ্যাকসিনেশন বাড়ালে থার্ড ওয়েভ সামাল দেওয়া যাবে। এখনই যা পরিস্থিতি তাতে পরিকাঠামো বেসামাল হয়ে গিয়েছে। থার্ড ওয়েভেও এমন হলে মুশকিল।


আশিস মান্না বলেন, শিথিলতার কারণে দ্বিতীয় ওয়েভ তাড়াতাড়ি চলে এসেছিল। এখন কোভিড মেনে চললে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। টিকাকরণে জোর দিতে হবে। বিশেষত শিশু ও মধ্য বয়স্কদের টিকাকরণ করাতেই হবে।


সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ যখন কাঁপুনি ধরাচ্ছে, তখন চিকিত্‍সকরা বলছেন, তৃতীয় ঢেউ থেকে নিজেদের যতটা সম্ভব রক্ষা করতে, এখনই আরও সচেতন হওয়া দরকার।