কলকাতা: কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে বাংলায় আরও কমেছে দৈনিক সংক্রমণ। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আরও এক প্রথম সারির কোভিড-যোদ্ধাকে হারাল কলকাতা। শুক্রবার মুকুন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়, বছর চল্লিশের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ রেশমি খান্ডেলওয়ালের।


চলতি মাসের গোড়ার দিকে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ছিলেন হোম আইসোলেশনে। কয়েকদিন আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে চিকিৎসক রেশমি খান্ডেলওয়ালকে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষ কয়েকদিন তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়।


কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবার বিকেল ৪টের সময় মৃত্যু হয় ওই চিকিৎসকের। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভে দেশে, ৫১৩ জন চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন।


দিন কয়েক আগেই ভ্যাকসিনের ২টি ডোজ নেওয়ার পরেও রাজ্যে চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল সিউড়ি সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অতনুশঙ্কর দাসের। কলকাতার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব চিকিৎসক দীর্ঘদিন সিউড়িতে কর্মরত ছিলেন। 


তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরও দিনকুড়ি আগে তিনি করোনা আক্রান্ত ওই চিকিৎসক। ভর্তি ছিলেন বোলপুরের কোভিড হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ওই চিকিৎসককে। গতকাল রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক সংগঠনের দাবি, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেও এ রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের বেশি চিকিৎসকের। করোনা-বিধি মানায় শিথিলতা দেখানোর কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে চিকিৎসকদের মত।


শুধু শহরাঞ্চল নয়, সুনামির মতো গ্রামেও আছড়ে পড়েছে সংক্রমণের স্রোত। পল্লি এলাকায় মহামারীর বাড়বাড়ন্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। গ্রামাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ রুখতে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আর এই আবহে একের পর চিকিৎসকের মৃত্যু। যা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত প্রশাসন।


এর আগে গত ২১ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক চিকিত্‍সকের মৃত্যু হল।  ইইডিএফ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে চিকিত্‍সক সুধীন ভট্টাচার্যের। তার আগে  করোনা প্রাণ কাড়ে রাজ্যের আরও এক চিকিৎসকের। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় আইএমএ-র বাঁকুড়া শাখার সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের। ষাটোর্দ্ধ এই চিকিৎসক ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই নিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।


বাংলাও আছে এই তালিকায়। তবে রাজ্যে সংক্রমণের হার আরও কমেছে। স্বাস্থ্য দফতরের শুক্রবারের হেলথ্ বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ১২ হাজার ১৯৩ জন। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। জেলাতেও সংক্রমণ নিম্নমুখী। উত্তর ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২ হাজার ৫২৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। কলকাতায় একদিনে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৫৭। মারা গেছেন ৩০ জন।