ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : অসুখে অসুখে জর্জরিত ছোট্ট এই জীবন। শুধু শারীরিক অসুখ? সেই সঙ্গে জুড়ে রয়েছে মানসিক অস্থিরতা। অনিশ্চয়তা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে কিশোরী। বয়স যখন ৯, তখন ধরা পড়ে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস। ওষুধ অনিয়মিত হলেই শুরু হয় ভয়ানক শারীরিক সমস্যা। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে চলছিল একাকী মায়ের লড়াই। পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-এ মেয়ের চিকিত্সা করাতেন মা। কিন্তু, পেটের টানে, মাস ছয়েক আগে, মাকে ভিন রাজ্যে যেতে হয়। তখন থেকে পঞ্চদশী কিশোরী তার কাকিমার কাছে থাকে।
সম্প্রতি কিশোরীর অবস্থা বেশ সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। হার্ট রেট কমে যায়। শরীর ক্রমে অসাড় হয়ে আসে। কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে কিশোরীকে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-এ রেখে চলে যান তাঁর কাকিমা। যার কাছে কিশোরীর মা দায়িত্ব দিয়েছিলেন মেয়ের দেখভালের। এর মাঝেই কার্যত বিনা মেঘে জোড়া বজ্রপাত। কিশোরীর কাকিমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, কিশোরীর চিকিৎসার খরচ তিনি বহন করতে পারবেন না। একটু সুস্থ হতে না হতেই আরও বড় ধাক্কা। কিশোরী কাছে থাকা ফোনে অপর প্রান্ত থেকে খবর আসে, অসমে গিয়ে আইনি জটিলতায় আটকে পড়েছে তার মা। আর যার জেরে তার মায়ের ঠাঁই হয়েছে জেলে।
সবমিলিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়েছে ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ কর্তৃপক্ষ। আপাতত অবশ্য হাসপাতাল নিজেদের খরচেই মেয়েটির চিকিত্সা করছে। ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-র ডিরেক্টর অপূর্ব ঘোষ বলেছেন, 'বাচ্চাটা যে ভর্তি। তাকে কোথায় দেওয়া যায়। মা অন্য রাজ্যে। আমরা চেষ্টা করছি ওকে কোনও সেফ জায়গায় রাখা যায়। যাতে চিকিত্সা হয়। সুস্থ হয়ে বাঁচতে পারে।' চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূণ গিরি বলেছেন, 'এরকম পরিস্থিতি আগেও হয়েছে। সোশ্যাল সার্ভিস এখানেও হয়েছে।'
এই চরম দোটানার পরিস্থিতির মাঝেও কিশোরীর মন পড়ে আছে বাড়িতে। সে সুস্থ হয়ে ফিরতে চায় মায়ের কাছে। সুস্থ হয়ে উঠে তার একটাই কথা 'মায়ের কাছে যেতে চাই।' কিন্তু উদ্ভূত অদ্ভূত এই পরিস্থিতির মাঝে আপাতত আতান্তরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।