ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: বিষাক্ত সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু আটকাতে নতুন ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। গবেষকদের দাবি, ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফল হলে বিষাক্ত সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।


বিষাক্ত সাপের ছোবল খাওয়ার পর রোগীর মূল লড়াই সময়ের সঙ্গে। বিষ যত তাড়াতাড়ি রক্তে মিশে যায়, ততই নিষ্ক্রিয় হতে থাকে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তাই অনেক সময় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অ্যান্টি স্নেক ভেনম দেওয়ার পরেও, শুধুমাত্র দেরির কারণে বাঁচানো সম্ভব হয় না রোগীকে। অথচ গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরকারি হাসপাতালে পৌঁছনো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এই প্রেক্ষিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা আশার আলো দেখছেন একটি ট্যাবলেটকে ঘিরে। 


নাম "ভারেসপ্ল্যাডিব মিথাইল"বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, বিষাক্ত সাপে কাটার পরে রোগীকে এই ট্যাবলেট খাওয়ালে দ্রুত হারে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হয়। ফলে অ্যান্টি স্নেক ভেনম দিয়ে চিকিৎসা শুরুর জন্য বাড়তি সময় পাওয়া যায়। সেই ভারেসপ্ল্যাডিব মিথাইলেরই ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হচ্ছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন, ওই হাসপাতালেরই মেডিসিন বিভাগের প্রধান। 


সাপের কামড়ের নতুন ওষুধ নিয়ে দেশে ৪টি হাসপাতালে গবেষণা হচ্ছে। পূর্বাঞ্চলে একমাত্র গবেষণা হচ্ছে কলকাতায়। এরাজ্যে সাপের কামড়ে মৃতের সরকারি পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বেসরকারি পরিসংখ্যান তো মারাত্মক। এ রাজ্যে সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর। অধিকাংশই হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছন। মারা যান। গবেষণা সফল হলে কাজে আসবে। 


ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ও গবেষক পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আমরা যে স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট, সেই অ্যান্টি স্নেক ভেনম দেব একদলকে। আরেকদলকে ট্যাবলেট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ৭২ জনের ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল হবে। 


চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পালের কথায়, বাংলা ও বাংলাদেশে সাপের প্রভাব মারাত্মক। জীবনের সঙ্গে যুক্ত। বর্ষাকালে সাপের কামড় বেশি। গুনিন, ওঝা হয়ে হাসপাতালে পৌঁচতে দেরি। এই ট্রায়াল সফল হবে কিনা, সময় বলবে। তবে এটা সফল হলে সুবিধা। সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এথিক্যাল কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে এই ট্রায়াল শুরুর নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ট্রায়াল শিশুদের ক্ষেত্রে নয়, শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের ওপরেই করা হবে।