কলকাতা: কলকাতাতেও শিশুদের মধ্যে বাড়ছে ভাইরাল নিউমোনিয়া। পার্ক সার্কাসের বেসরকারি হাসপাতালে ২০ জন শিশু ভর্তি। ২০ জনের মধ্যে ৮ জন শিশু ভর্তি আইসিইউতে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বহু শিশু। অসুস্থ শিশুদের সবাই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, করোনা নেগেটিভ।
এই বিষয়ে চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন, এই ভাইরাল নিউমোনিয়া সাধারণত শীতের শুরু বা শেষে দেখা যায়। মূলত মরশুমে বদলের সময়। পাশ্চাত্য দেশে দেখা গিয়েছে, কোভিডের পিক সময় এই ভাইরাল থাকছে না। অথচ, মধ্যবর্তীকালে সেখানকার গ্রীষ্মকালেও এই ভাইরাল নিউমোনিয়া দেখা গিয়েছে।
প্রভাস প্রসূন বলেন, এখানে গত ৩-৫ সপ্তাহে এই ভাইরাল নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। বাচ্চারা ভালই এই ভাইরালে আক্রান্ত হচ্ছে। তাঁর মতে, বাড়ির বড়রা আক্রান্ত হচ্ছেন। সেখান থেকে সংক্রমিত হচ্ছে বাচ্চারা।
এই পরিস্থিতিতে তাঁর পরামর্শ, বড়রা আক্রান্ত হলে বাচ্চাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন, মাস্ক পড়ুন। বাচ্চারা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শুধু কলকাতা নয়, উত্তরবঙ্গেও বাড়ছে শিশু ভর্তির সংখ্যা। জ্বর, পেটের অসুখ, বমির মতো উপসর্গ নিয়ে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ক্রমশ বাড়ছে শিশু ভর্তির সংখ্যা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি ৩ জন শিশু।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১৩০ জন শিশু জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২ শিশুকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মূলত ৩ থেকে ৯ বছরের যে শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই ময়নাগুড়ি, ক্রান্তি, ধূপগুড়ি, হলদিবাড়ির বাসিন্দা। জ্বর, বমি, পেটের অসুখের মতো উপসর্গ নিয়ে ভর্তি শিশুদের করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া পরীক্ষাও করা হচ্ছে।
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রাহুল ভৌমিক বলেন, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ফোকাস, কোভিড টেস্ট করে ভর্তি, কোভিড পাইনি, আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য, মল-মূত্রের নমুনা পাঠাচ্ছি। ভর্তির পাশাপাশি ছুটি হচ্ছে, ২ জন ক্রিটিক্যাল।
এই পরিস্থিতিতে, গত সোমবার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক। বৈঠকে দ্রুত পিআইসিইউ ওয়ার্ড চালু নিয়ে আলোচনা হয়। হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ শিশুদের মায়ের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক।
জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, সিজিনাল জ্বর বলে মনে হচ্ছে, কোভিড নয়, ডেঙ্গি নয়, ৪৮ জন বাড়ি ফিরেছে, পরিকাঠামো নিয়ে বৈঠক, খতিয়ে দেখলাম, আউটডোরে ভিড়, ১২বেড়েছে, বিশেষজ্ঞরা আছেন। এসএনসিইউ বা সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে ৮ দিনের এক শিশু।
সম্প্রতি, কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে জ্বরহীন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে চার শিশুও ছিল।
চিকিত্সকদের মতে, শিশুদের ক্ষেত্রে উপসর্গ হল, জ্বর না থাকা। ডায়েরিয়া, সর্দি কাশি। সমস্যা হল, জ্বর না থাকায় প্রথমে চিকিত্সকরা ডায়েরিয়ার ওষুধ দেন। তারপর ওষুধ দেওয়া হয় সর্দি-কাশির। কিন্তু তাতেও সুস্থ না হওয়ায় কোভিড, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করা হয়। তখনই ধরা পড়ে প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় কাবু প্রত্যেকে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায় বলেন, আমরা চরিত্র ধরতে পারছি না। না পারার ফলে ভয় বাড়ছে। দেরি হলে কী সমস্যা হতে পারে বলছে।
ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট চরিত্র বদলেছে বলেই এই সব জটিলতা দেখা যাচ্ছে। জ্বরহীন ম্যালেরিয়া উদ্বেগ বাড়িয়েছে চিকিত্সকদের।