কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ভোট শেষ হলেও থামেনি রাজনৈতিক হিংসা (Post poll violence)। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সময়সীমা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল কমিশন। প্রথম ঠিক ছিল ৬ জুন পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী (CAPF)। কিন্তু, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জন্য তার সময়সীমা বৃদ্ধি করে ১৯ জন পর্যন্ত রাজ্যে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন (ECI)। রবিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে তাদের তরফে।
লোকসভা ভোটের অন্তিম তথা শেষ দফার ভোট শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত থামেনি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা। শনিবার অন্তিম তথা সপ্তম দফার ভোট শেষ হতেই ট্যাংরা, যাদবপুর ও সোনারপুরের বেশকিছু জায়গায় শুরু হয় রাজনৈতিক হিংসা। যা পরে চরম আকার ধারণ করে। বেলেঘাটা, ট্যাংরা, যাদবপুর থেকে শুরু করে কলকাতা লাগোয়া সোনারপুর, দিকে দিকে আক্রান্ত হন বিরোধী দলের কর্মীরা। বজবজ, মহেশতলা ও মথুরাপুরে ভোট মিটতেই সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। ডায়মন্ডহারবারের শতাধিকের বেশি বুথে ভোট লুটের অভিযোগ জানিয়ে সেখানে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বারাসাত ও মথুরাপুরে রিগিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সেখানকার দুটি বুথে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত সেখানে ফের ভোটগ্রহণ হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। মথুরাপুর লোকসভা কাকদ্বীপের ২৬ নম্বর বুথে ফের পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা করার পাশাপাশি বারাসতের ২৬ নম্বর বুথেও পুনর্নির্বাচন হবে বলে জানিয়ে দেয় কমিশন। ইতিমধ্যেই নদিয়ার কালীগঞ্জে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় একজন বিজেপি কর্মীকে গলা কেটে নৃংশসভাবে খুন করার অভিযোগ ওঠে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। ডায়মন্ডহারবারের শতাধিক বুথেও সন্ত্রাসের কারণে ফের পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়নি কমিশনের তরফে।
শনিবার বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হতে না হতেই ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস চরম চেহারা নেয়। বেলেঘাটা, ট্যাংরা ও যাদবপুর থেকে শুরু করে কলকাতা লাগোয়া সোনারপুর। রাজ্যের শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হাতে দিকে দিকে আক্রান্ত হন বিরোধী দলের কর্মীরা। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাই শেষ দফার ভোটে তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পোলিং এজেন্ট হিসেবে ছিলেন। কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিজেপির এজেন্ট। অন্যদিকে কালীগঞ্জে একজন বিজেপি কর্মীকে নৃংশসভাবে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
শনিবার বেলেঘাটার গুরুদাস কলেজের একটি বুথে তাপস রায়ের পোলিং এজেন্ট ছিলেন সবিতা বসু। তাঁর অভিযোগ, ভোট শেষ হওয়ার পরেই মারধর করে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ বাদে ওখানে থাকা তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট ভুয়ো ভোটারদের নিয়ে এসে ভোট দিতে চান। আমি তা হতে দিতে দিইনি। এমনকী তৃণমূলের যে পোলিং এজেন্ট ছিলেন যাঁর বাবা মারা গেলে তিনি তাঁর ভোটটাও দিতে চান। বলেন, যে আমি আমার বাবার ভোটটা দেব। এগুলো আমি আটকেছি। তখন ওরা বলেছিল যে, ঠিক আছে, দেখা যাবে বাইরে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরে সবিতা বসু বাইরে এলে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ট্য়াংরাতেও বিজেপির পোলিং এজেন্টকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে গণনার আগে রানাঘাটের স্থানীয় সিপিএম নেতা ও লোকসভা প্রার্থীর একজন কাউন্টিং এজেন্টকে রবিবার সকালে প্রকাশ্য রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠে। এর জেরে ওই ব্যক্তি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এই সমস্ত অভিযোগ পাওয়ার পরেই ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ১৯ জুন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোতায়েন করার কথা ঘোষণা করে কমিশন।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।