কলকাতা: কসবায় ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রে দেওয়াই হয়নি কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিন। কসবা প্রতারণা কাণ্ডে এমনই বিস্ফোরক দাবি করল কলকাতা পুরসভার। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি সিএমওএইচ জানিয়েছেন, সাধারণত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ভায়ালে ব্যাচ নম্বর, এক্সপায়ারি ডেট, ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট লেখা থাকে। তবে দেবাঞ্জনের অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া ভায়ালের কোনওটাতেই ছিল না ব্যাচ নম্বর, এক্সপায়ারি ডেট। ছিল না ম্যানুফ্যাকচারিং ডেটও। শিশির আয়তনও তুলনামূলক ছোট এবং লেখা ছিল না কোম্পানির নম্বরও।


করোনার ভ্যাকসিনের মতো দেখতে এই ভায়ালে ভ্যাকসিনেশন চললেও এই ভ্যাকসিন করোনার নয় বলেই দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার নামে সম্ভবত হাম কিংবা বিসিজির ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল এতদিন। করোনার ভ্যাকসিনের বদলে কোনও মিক্সড ভ্যাকসিন অর্থাৎ পাউডারে জল মিশিয়ে চলছিল ভ্যাকসিনেশন। করোনার এমন কোনও ভ্যাকসিন নেই বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার কোনও ভ্যাকসিনই পাউডারের সঙ্গে জলীয় পদার্থ মিশিয়ে দেওয়ার নিয়ম নেই। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানাচ্ছেন পুরসভার স্বাস্থ্য কর্তারা।


উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন প্রতারণাকাণ্ডে অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবকে নিয়ে কসবায় তাঁর অফিসে হানা দেয় পুলিশ, সঙ্গে ছিল ফরেন্সিক দল। তল্লাশি চালিয়ে তাঁর অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু ভায়াল। পাশাপাশি উদ্ধার হয়ছে মাস্ক, স্যানিটাইজার, ওষুধ, নথি এবং গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। পাশাপাশি, পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত ভায়াল সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ নয়। কিন্তু আসল না নকল, তা নিয়ে সংশয় থাকায় পরীক্ষার জন্য বাজেয়াপ্ত করা ভ্যাকসিন ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। 


কসবার ভ্যাকসিনের ক্যাম্পের তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এদিন দেবাঞ্জনকে জেরায় তদন্তকারীরা জানতে চান, কী কারণে ভ্যাকসিন ক্যাম্পের আয়োজন? কাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল? কারা ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল? টাকার জোগান কোথা থেকে হচ্ছিল? ভ্যাকসিন কোথা থেকে সংগ্রহ করছিলেন দেবাঞ্জন? ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয়ে আর কী কী করেছিলেন ওই যুবক? আর কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গতকালই প্রতারণাকাণ্ডের তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা। 


ইতিমধ্যেই যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁরা জানাচ্ছেন, ভ্যাকসিন বের করতে দেখেননি তাঁরা। ফোন নিয়েও সেন্টারের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি। সবমিলিয়ে কসবার ভুয়ো ভ্যাকসিন ক্যাম্প নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণের মধ্যেও। এই ক্যাম্প থেকে কারা টিকা নিয়েছিলেন, তার তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কসবা নিউ মার্কেটে পুরসভার তরফে ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে এসে শারীরিক সমস্যার কথা জানাচ্ছেন ভ্যাকসিন গ্রহীতারা। পরীক্ষা করে তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছেন পুরসভার মেডিক্যাল অফিসাররা। কসবায় দেবাঞ্জনের ভ্যাকসিন ক্যাম্পে যারা টিকা দিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গড়া হয়েছে কমিটি।