কলকাতা:  কসবা ভ্যাকসিন-প্রতারণাকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে তদন্তকারীদের হাতে। 


স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত ছিলেন দেবাঞ্জন দেব। ঘুরে বেড়াতেন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। চড়তেন ভারত সরকারের স্টিকার লাগানো গাড়িতে।


অন্যদিকে, দেবাঞ্জনকে জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কসবা ছাড়া উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজেও ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করেন দেবাঞ্জন। 


কলেজ অধ্যক্ষের দাবি, কলকাতা পুরসভার জয়েন্ট কমিশনার পরিচয়ে প্রথমে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করে কলেজ কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেন দেবাঞ্জন। 


এরপর ১৮ জুন কলেজে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক, প্রাক্তনী ও ছাত্র ছাত্রী মিলে ৭২ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন।। অধ্যক্ষের দাবি, কোভিশিল্ডের পাশাপাশি স্পুটনিক ভি-ও দেওয়ার কথা জানান দেবাঞ্জন। 


অভিযোগ, ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের ছবি তোলার চেষ্টা করায় বাধা দেওয়া হয়। এক কলেজ পড়ুয়াকে দেবাঞ্জনের দেহরক্ষীরা মারধরও করেন বলে অভিযোগ।


তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, কী কারণে ভ্যাকসিন ক্যাম্পের আয়োজন? কাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল? কারা ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল? টাকার জোগান কোথা থেকে হচ্ছিল? ভ্যাকসিন কোথা থেকে সংগ্রহ করছিলেন দেবাঞ্জন? ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয়ে আর কী কী করেছিলেন ওই যুবক? আর কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 


এর পাশাপাশি, পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত ভায়াল সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ নয়। কিন্তু আসল না নকল, তা নিয়ে সংশয় থাকায় পরীক্ষার জন্য বাজেয়াপ্ত করা ভ্যাকসিন ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। প্রতারণাকাণ্ডের তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা।


সরকারি নথি জাল করে কসবায় শুধু ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করাই নয়, সামনে এল ভুয়ো আইএএস-এর বিরুদ্ধে প্রতারণার আরও অভিযোগ। 


কলকাতা পুরসভা সহ অন্যান্য পুরসভায় সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে ইন্টারভিউও নিয়েছিলেন কসবাকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেব। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। 


জানা গিয়েছে, কসবার অফিস এবং বারুইপুরে নেওয়া হয় সেই ইন্টারভিউ। তালতলা থানায় চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগ দায়ের করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। 


অভিযোগে বলা হয়েছে, ইন্টারভিউ নেওয়ার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে চাকরি প্রার্থীদের ঠিকানা, ব্যাঙ্ক ডিটেল, আধার কার্ড সহ বিভিন্ন নথি।  অভিযোগকারীদের আশঙ্কা, ওই সব নথি অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।


এদিকে, কসবার ভুয়ো ভ্যাকসিন ক্যাম্প থেকে কারা নিয়েছিলেন টিকা, তার তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিল কলকাতা পুরসভা। কসবা নিউ মার্কেটে পুরসভার তরফে ক্যাম্প করা হয়েছে। 


সেখানে এসে শারীরিক সমস্যার কথা জানাচ্ছেন ভ্যাকসিন গ্রহীতারা। পরীক্ষা করে তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছেন পুরসভার মেডিক্যাল অফিসাররা।