কলকাতা : কার্যত দুর্গাপুজোর ঘণ্টা বেজে গেছে। চারিদিকে কাশফুলের সমারোহ। এদিকে রাত পোহালেই মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ দিনকে বলা হয় মহালয়া। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস, এই দিনেই দেবী দুর্গার মর্তে আগমন হয়। বহু বছর ধরে সেই বিশ্বাসে ভর করেই বাঙালিরা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দেবীকে স্বাগত জানান। বাঙালির কাছে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটিতে প্রত্যেক বাঙালির ঘরে ঘরে কার্যত বেজে ওঠে রেডিও। ভোর ৪টে থেকেই দেবীর আগমনের খুশির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রেডিওয় বেজে ওঠে মহিষাসুরমর্দিনী। যে-ই ক্লাসিক সময়ের সাথে সাথে আজও বাঙালির হৃদয় জুড়ে রয়েছে। সম্পূর্ণ উপস্থাপনায় মহিষাসুরের হাত থেকে দেবতাদের রক্ষার লক্ষ্যে দেবী দুর্গার আবির্ভাবের কাহিনি বর্ণনা করা আছে।
এর সুর কম্পোজ করেছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। গলা দিয়েছিলেন সেই সময়ের নামীদামি সঙ্গীত শিল্পীরা। ছিল চণ্ডীপাঠ। আর ছিল কালজয়ী বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের গলা। যা শুনতে শুনতে আজও শিহরিত হয়ে ওঠে বাঙালি। আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র।
১৯০৫ সালে উত্তর কলকাতার আহিরীটোলায় জন্ম বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর। বাবা কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা সরলাবালা দেবী। ১৯২৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওয় যোগ দেন। এর পরে পঙ্কজ কুমার মল্লিকের 'মহিষাসুরমর্দিনী'র প্রধান কণ্ঠশিল্পী হয়ে ওঠেন। কিংবদন্তি রেডিও ভয়েস হয়ে ওঠার পাশাপাশি, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একজন চমৎকার নাট্যকার ও পরিচালক ছিলেন। থিয়েটারে 'সাহেব বিবি গোলাম' পরিচালনা করেছিলেন। ছিলেন সমৃদ্ধ লেখকও। 'নিষিদ্ধ ফল' নামে ফিল্ম স্ক্রিপ্টও লিখেছেন।
১৯৩১ সালে ৯০ মিনিটের মহিষাসুরমর্দিনী প্রথম কম্পোজ হয়েছিল পঙ্কজ কুমার মল্লিকের তত্ত্বাবধানে। বহু বছর ধরে এর লাইভ পারফরম্যান্স করেছেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্য়ায়, আরতী মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা। ১৯৬৬ সালে এটি রেকর্ড করা হয়। তার পর থেকেই এটি রেকর্ডেড ভার্সন বাজানো হয় বিভিন্ন সময়ে। অল ইন্ডিয়া রেডিও কলকাতার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা গলায় এর রেকর্ড করার চেষ্টা হয়। ১৯৭৬ সালে গলা দেন উত্তম কুমারও। কিন্তু, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উচ্চতায় কেউ পৌঁছতে পারেননি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এই কিংবদন্তি ১৯৯১ সালে ৩ নভেম্বর ৮৬ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু, আজও তাঁর অমর সৃষ্টি বেজে ওঠার সাথে সাথে বাঙালির দুর্গাপুজোর দামামা বেজে ওঠে।