কলকাতা : কলকাতার পর আরও চার পুরসভার ভোটে (Municipal Election) 'সবুজ ঝড়'। বড় জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। শিলিগুড়ি, আসানসোল, চন্দননগর ও বিধাননগর- চারটি পুরসভার ২২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে, ১৯৮টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে শাসক দল। প্রাপ্ত ভোট শতাংশের নিরিখে বিধাননগর ও চন্দনগরে বিজেপিকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামেরা। অন্যদিকে, আসানসোল ও শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি।


কর্পোরেশনের ভোটে তৃণমূল চারে চার। বিধাননগর থেকে চন্দননগর, শিলিগুড়ি থেকে আসানসোল- রাজ্যের চার প্রান্তেই তৃণমূলের বিপুল জয়। ৪ পুরসভার ২২৬টা ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯৮ টাতেই জিতেছে তৃণমূল। অর্থাৎ মোট ওয়ার্ডের প্রায় ৮৮ শতাংশে জিতেছে ঘাসফুল শিবির। চার পুরসভা মিলিয়ে বিজেপি জিতেছে ১২টা আসনে (৫%), বামেরা ৭টা (৩%) , কংগ্রেস ৫টা (২%) এবং নির্দলেরা ৪টে আসনে জিতেছে (২%)।


কলকাতা ঘেঁষা বিধাননগর পুরসভায় ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৯টা ওয়ার্ডেই জিতেছে তৃণমূল। ১ মাত্র ওয়ার্ডে জিতে কার্যত একমাত্র বিরোধী কংগ্রেস। একটায় নির্দল প্রার্থী জিতেছেন। একদা গেরুয়া শিবিরের ভাল ভোটব্যাঙ্ক বলে পরিচিত বিধাননগরে ধুয়েমুছে গেছে বিজেপি। শূন্য বামেদের ঝুলিও। 


উত্তরবঙ্গে বিজেপির গড়েও থাবা বসিয়েছে তৃণমূল। ৪৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টা ওয়ার্ডে জিতেই প্রথমবার শিলিগুড়ি পুরসভা দখল তৃণমূলের। ৫টায় বিজেপি, ৪টেতে বামেরা এবং একটায় কংগ্রেস জিতেছে। হেভিওয়েটদের মধ্যে সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য এবং বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ পরাজিত। জয়ী হয়েছেন গৌতম দেব।


চন্দননগর পুরসভার ৩২টা ওয়ার্ডের মধ্যে ৩১টা ওয়ার্ডে জিতেছে তৃণমূল। একটায় বামেরা জিতেছে। এখানে বিজেপি শূন্য। অন্যদিকে, আসানসোল পুরসভার ১০৬টা ওয়ার্ডের মধ্যে ৯১টা ওয়ার্ডেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ৭টা আসনে বিজেপি, ৩টিতে কংগ্রেস, ২টো আসনে বামেরা এবং ৩টিতে নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন। 


প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিধাননগর ও চন্দনগরে বিজেপিকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা। আসানসোল ও শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি। আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে প্রার্থীরা জিতেছেন একেবারে কান ঘেঁষে। 


আসানসোল পুরসভার ৯০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেছে মাত্র ২ ভোটে। ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি জিতেছে ৪ ভোটে। আর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী জিতেছেন ৫১ ভোট। 


শিলিগুড়ি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি জিতেছে ৪০ নম্বর ভোটের ব্যবধানে। আর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ১১ ভোটের মার্জিনে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী।


আসানসোলের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আবার ফল ঘোষণা হয়েছে টসে। টসে তৃণমূলের কাছে হেরে গেছে সিপিএম। এই ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী এবং তৃণমূল প্রার্থী উভয়েই ২ হাজার ৩৫৮টি করে ভোট পান। দুই প্রার্থী সমসংখ্যক ভোট পাওয়ায় টসের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এরপর দু’টি কাগজে দুই প্রার্থীর নাম লেখা হয়। প্রার্থীদের নাম লেখা কাগজের টুকরো দু’টি একটি পাত্রে রাখা হয়। তার পর রিটার্নিং অফিসার পাত্র ঝাঁকিয়ে একটি কাগজ তুলে নেন। কাগজের টুকরোয় তৃণমূল প্রার্থীর নাম লেখা ছিল। তিনিই জয়ী হন। 


চার পুরভোটের ফলাফল নিয়ে স্বভাবতই খুশি তৃণমূলনেত্রী। বলেন, "বিধাননগর, শিলিগুড়ি, চন্দননগর, আসানসোল, কলকাতা পুরসভায় জিতেছি। আগামী দিনে আরও কয়েকটি পুরসভা নির্বাচন আছে। আগামী দিনে আমার লক্ষ্য শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান।"


যদিও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমরা আগেই বলে দিয়েছিলাম, ভোট হয়নি। ভোট লুঠ হয়েছে। আর ফলাফলেও দেখা গেল তাই।"


সুর চড়িয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, ভোটের আরেক নাম লুট। এখন ভোট মানে সরকারি দলের লোকেদের পেট ভর্তি মদ দাও, মাংস দাও, ডিজে দাও, টাকা দাও, লুট করার সনদ দিয়ে যাও। পুলিশ চুপ, মস্তান যা খুশি করবে। মানুষ ভোট দিতে পারবে না।


অন্যদিকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, এই ফলই তো হওয়ার ছিল। লুটের ভোট।