কলকাতা: নারদ মামলার শুনানিতে 'স্লেজিং'! এমন ঘটনাই ঘটল কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানিতে। এ সপ্তাহের মতো শুনানি শেষ। আগামী সপ্তাহে ফের হাইকোর্টে নারদ মামলার শুনানি হবে।
বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীনই সিবিআই-এর আইনজীবী তুষার মেহতার বক্তব্যর মাঝে মন্তব্য করতে থাকেন ৪ হেভিওয়েট নেতামন্ত্রীদের আইনজীবী কল্যণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেন মজার ছলে বলেন, 'আম্পায়ার যতই চেষ্টা করুক না কেন ব্যাটসম্যানের কাছে থাকা ফিল্ডার মন্তব্য করবেই।' উত্তরে মজা করেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, হ্যাঁ, স্লেজিং চলতে থাকে।'
আসল বিষয়টা শুরু গতকাল। বুধবার শুনানি চলাকালীন সলিসিটর জেনারেল অভিযোগ করেন, বিরতির সময় বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর, তাঁকে ‘anti - bengal’ বলে মন্তব্য করেন হেভিওয়েটদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের জন্মভূমি এটা। অনেক মহান মানুষ এখানে জন্মেছেন। এই মন্তব্য অনভিপ্রেত। পাল্টা হেভিওয়েটদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এগুলো মামলা বহির্ভূত বিষয়। এটা নিয়ে নালিশ করার কোনও মানে হয় না।
এর আগে, বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন, ২০১৭ সালে নারদকাণ্ডের তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হেভিওয়েট, অর্থাৎ সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়নি।
গত ১৭ মে সকালে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাঁরা নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান। আপনারা হাইকোর্টে ইমেল করে অভিযোগ জানান। এরপর হাইকোর্ট জামিনে স্থগিতাদেশ দেয়।
আপনারা যদি আদালতের সাধারণ নিয়ম মেনে পরের দিন বা তার পরের দিন মামলা করতেন, আর সেখানেও যদি একই নির্দেশ দিত আদালত, তাহলে আপনাদের অধিকার কীভাবে খর্ব হতো?
এরপর বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ফের প্রশ্ন করেন, আপনারা যে মেল পাঠিয়েছিলেন, সেখানে মামলার কোন্ চরিত্র মেনে অভিযোগ করেছেন, সেটা পরিষ্কার করে বলা ছিল না।
এরপর, সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন করেন, যে ইমেল আপনারা পাঠিয়েছিলেন, তাকে আমরা মামলার কোন চরিত্র হিসেবে ধরব? জনস্বার্থ, জামিন খারিজ, না রিট?
উত্তরে তুষার মেহতা বলেন, আমাদের চিঠিতে একাধিক অভিযোগ ছিল যার মধ্যে জনস্বার্থ অন্যতম।
এরপর বিচারপতি হরিশ টন্ডন তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন, আপনার কি মনে হয় না, বিচারব্যবস্থার যে ক্রম উচ্চ শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে, সেটাও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ?
তখন সিবিআই আইনজীবী বলেন, প্রধান বিচারপতি হলেন মাস্টার অফ রস্টার, তিনি যেকোনও মামলা যেকোনও বিচারপতির কাছে শুনানির জন্য পাঠাতে পারেন।
এরপর তুষার মেহতাকে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, এই বৃহত্তর বেঞ্চ যদি নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করতে পারে, তাহলে কি জামিনের আবেদনেও মঞ্জুর করতে পারে?
উত্তরে সিবিআই এর আইনজীবী বলেন, হাইকোর্ট মনে করলে যেমন মামলা স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারে, তেমনই জামিনের আবেদনের স্থানান্তরের নির্দেশও দিতে পারে।
জামিনের আবেদন হাইকোর্টে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা নেই। এই মামলার শুনানির পর চূড়ান্ত নির্দেশ দিতে পারে হাইকোর্ট।
এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, আমরা চাই এখন আগে জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হোক।
তখন তুষার মেহতা বলেন, আগে জামিনের শুনানি হলে মামলার বাকি অংশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। প্রথম পর্বে ৩ দিন সওয়াল করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা।
এরপর হেভিওয়েটদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, সমস্ত দিক থেকেই এটা একটা অভূতপূর্ব মামলা।
চার হেভিওয়েটদের গ্রেফতারির দিন তৃণমূল সমর্থকের ভিড়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, তিনি বলেন, সমস্ত বিষয় ছেড়ে সিবিআই শুধুমাত্র মানুষের ভিড় নিয়েই চিন্তিত। সিবিআই কখনও গোটা ঘটনার বিশদ বিবরণে যেতে চাইছে না। কারণ তাহলে তারা অসুবিধার মধ্যে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, কীভাবে বিচারক বাধাপ্রাপ্ত হলেন, কীভাবে বিচারব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হল, কীভাবে বিচারক পক্ষপাতদুষ্ট হলেন, কীভাবে মানুষের ভিড় এর জন্য দায়ী, তার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সিবিআই-এর কাছে নেই। এরপরই এদিনের মতো, শুনানি শেষ হয়ে যায়।
গতকাল, সিবিআই-এর উদ্দেশে বিচারপতি হরিশ টন্ডন বলেন, হলফনামায় আপনারা বলেছেন, যে জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু এখানে বলছেন, যে আপনারা ভালো করে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে পারেননি। এটা স্ব-বিরোধী অবস্থান হয়ে যাচ্ছে না?
এরপর বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, আপনারা আদালতে উপস্থিত থেকে বিকাল ৬ টার সময় চার্জশিট পেশ করেছেন। বিচারক সন্ধে ৭ টায় রায় দিয়েছেন। আপনারা সেই সময় কেন কেস ডায়েরি পেশ করেননি? সেই সময় তাহলে বিচারক কেস ডাইরি দেখে তাঁর রায় দিতে পারতেন। কিম্বা আপনারা মামলা পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাতে পারতেন।
এরপর সিবিআই-এর আইনজীবীর উদ্দেশ্যে ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, বিচারক অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন। মামলা তাঁর কাছে আবারও শুনানি হত। আপনারা তো সেখানেও প্রত্যেকদিন শুনানির আবেদন জানাতে পারতেন।
প্রত্যুত্তরে তুষার মেহতা বলেন, নিম্ন আদালতে রোজ শুনানি কার্যত অসম্ভব।