কলকাতা: মুকুল রায়কে ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মুকুল রায়কে ফোন করেন নরেন্দ্র মোদি। ফোন করে মুকুল রায়ের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। দু’জনের মধ্যে বেশ খানিকক্ষণ কথা হয়। 


মুকুল রায় সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ১০ মে মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপর রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও, ফুসফুসের সমস্যা থাকায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া যায়নি। 


বুধবার সন্ধে পৌনে সাতটা নাগাদ অ্যাপোলো হাসপাতালে তাঁকে দেখতে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু।  


হাসপাতালের ঘরে গিয়ে মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখেন অভিষেক। পনেরো মিনিট সেখানে ছিলেন তিনি। মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর সঙ্গে বেশকিছুক্ষণ কথা বলেন। চিকিৎসকদের থেকে মুকুল রায়ের স্ত্রীর চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। 


মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, অভিষেকের এই সৌজন্যে তিনি আপ্লুত। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর, মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে যান দিলীপ ঘোষ। 


তিনি অবশ্য অভিষেকের যাওয়ার বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। বলেন, পুরনো পরিচিত, দেখা করতেই পারেন। এই সময় পাশে থাকা দরকার। 


তবে এটা কি নেহাতই সৌজন্য? নাকি এর নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে কোনও রাজনৈতিক সম্ভাবনা? সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। 


তৃণমূলে থাকাকালীন চাণক্য বলেই পরিচিত ছিলেন মুকুল রায়।  তিনি এখন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি। তৃণমূলে থাকাকালীন লোকসভা থেকে রাজ্যসভা, পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা-- নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাতেন মুকুল। 


কিন্তু, এবারের বিধানসভা ভোটে তাঁকে সেভাবে বিজেপির হয়ে সার্বিকভাবে কৌশল সাজাতে দেখা যায়নি। কারণ, এবার তাঁকেই কৃষ্ণনগর উত্তর আসনে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। 


ফলে মূলত নিজের কেন্দ্রের আটকে ছিলেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর মতো তৃণমূল থেকে আসা নেতাকে নিজের কেন্দ্রের পাশাপাশি গোটা রাজ্যে প্রচারে কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। 


যদিও, বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া খেলোয়াড় মুকুল রায়কে আগের মতো এবার রাজ্যজুড়ে খেলতে দেখা যায়নি। তিনি কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেলায় হারালেও, তাঁর ছেলে তথা বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায়কে নিজের পুরনো বিধানসভা কেন্দ্র বীজপুর থেকেই হারতে হয়েছে। 


বিধানসভা ভোটে জয়ের পর সম্প্রতি শপথ নিতে বিধানসভায় আসেন মুকুল রায়।  বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে।


সেই সময় বিধানসভায় নতুন বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু সেই বৈঠকে যোগ না দিয়েই বিধানসভা থেকে চলে যান মুকুল। 


এরফলে মুকুল রায়ের ভবিষ্যত রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু, সঙ্গে সঙ্গে ট্যুইট করে তিনি বলেন, ‘রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে বিজেপি-র সৈনিক হিসেবে আমার লড়াই চলবে। আমি সকলকে কল্পনা আর অনুমান বন্ধ করার অনুরোধ করছি। আমার রাজনৈতিক পথ নিয়ে সংকল্পে অবিচল আমি।’


এরপর ফের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়, বিজেপি কি মুকুল রায়কে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা করবে, না কি শুভেন্দু অধিকারীকে?


কিন্তু, কিছুটা নাটকীয়ভাবেই নিজেকে বিরোধী দলনেতার রেস থেকে সরিয়ে নিয়ে মুকুল শুভেন্দুর নাম প্রস্তাব করেন। এরপর মুকুল রায় করোনা আক্রান্ত হন।  করোনা আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রীও। 


তৃণমূল তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজেপি নেতারা যখন বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচনায় সরব হচ্ছে, তখন কয়েকদিন আগেই মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু ফেসবুকে লেখেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আসা সরকারের সমালোচনা করার আগে, আত্মসমালোচনা করা বেশি প্রয়োজন।


প্রসঙ্গত, ভোটের মাঝে শুভ্রাংশু রায়ের বাবা মুকুল রায় সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের গলাতেও শোনা গেছিল কিছুটা নরম সুর। বলেছিলেন,  মুকুল বেচারা থাকে কাচরাপাড়া। ব্যারাকপুর, জগদ্দল, ভাটপাড়া। এটা ওপর নিজের এলাকা। ওকে পাঠিয়ে দিয়েছে কৃষ্ণনগর। মুকুল শুভেন্দুর মতো এত খারাপ নয়। অন্তত এটা আমি বলব।