কলকাতা: প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সওয়াল-পর্ব চলার পর আজকের মতো শেষ হয়ে যায় নারদকাণ্ডের শুনানি। এখনও নারদকাণ্ডে হেভিওয়েটদের জামিন সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হল না। শুক্রবারের মত কলকাতা হাইকোর্টে নারদ মামলার শুনানি শেষ। মঙ্গলবার ছুটি নেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। বুধবার ফের বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানি।
নারদকাণ্ডের শুনানিতে বুধবার পর্যন্ত হাইকোর্টে মামলা স্থগিতের আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। সেই আর্জি খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্টে শুরু হয় নারদকাণ্ডের শুনানি।
শুনানিতে প্রথমেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল মন্তব্য করেন, ‘আগে আমাদের বিষয়টি বুঝে নিতে দিন।’ হাইকোর্টে সওয়াল সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘সিবিআই দফতরে জমায়েত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিবিআই দফতর লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আদালতে রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী চলে গিয়েছিলেন। পরিকল্পিত ভাবে গ্রেফতারি এড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। ধৃতদের আদালতে পেশ এড়াতেই সবকিছু করা হয়।’
‘গত সোমবার কি এই আবেদনই করেছিল সিবিআই?’ তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীকে প্রশ্ন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়।
বিচারপতি সৌমেন সেন সলিসিটর জেনারেলকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের সোমবারের আর্জিতে বলা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী বাধা সৃষ্টি করছেন। মুখ্যমন্ত্রী-নেতারা বাধা সৃষ্টি করছেন, তাই আদালতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তাই তো?’ বিচারপতি সৌমেন সেন তুষার মেহতার কাছে আরও জানতে চান, ‘আপনারা কি চান এই চারজন নিম্ন আদালতে যে জামিনের আবেদন করেছেন তাও আমরা শুনব?’
তখন সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘যদি মামলা হাইকোর্টে স্থানান্তরের আবেদন হাইকোর্ট মঞ্জুর করে তাহলে আমাদের জামিনের শুনানিতে অসুবিধা নেই।’ তুষার মেহতা তাঁর সওয়ালে আরও বলেন, ‘চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে চার্জশিট পেশ করেছি।’ তখন হাইকোর্টে সওয়াল অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘আমরা গ্রিন করিডর করে কোর্টে নিয়ে গিয়েছি। এটা তাঁদের ইচ্ছা তাঁরা কীভাবে চার্জশিট পেশ করবেন।’
এরপর বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানতে চাইলেন ‘নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার কী অবস্থা?’ তখন নেতা-মন্ত্রীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি পাল্টা সওয়াল করেন, ‘যাঁরা ১৭মে জামিন পেলেন, হাইকোর্ট স্থগিত করল, তাঁরা জামিনে মুক্ত থাকার অধিকার পাবেন কীনা সেটাই মেগা ইস্যু।’
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি তাঁর সওয়ালে বলেন, জামিন স্থগিতের সময় ধৃতদের বক্তব্য কেন শোনা হল না? সিবিআই গত সোমবারের ঘটনায় যে অভিযোগ তুলছে তার ৯৫ শতাংশই ঘটেনি।’
এই প্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেলকে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘২০১৩ সালে মামলা শুরু হয়েছে। ৭ বছর ধরে আপনারা গ্রেফতারের প্রয়োজন মনে করলেন না? গ্রেফতারির পর তাঁরা যখন জামিন পেলেন তখন খারিজের জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছেন।’
সিবিআইয়ের উদ্দেশ্যে বিচারপতি সৌমেন সেন মন্তব্য করেন, ‘সিআরপিসি ৪০৭ নম্বর ধারায় বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে। নিম্ন আদালতে জামিন খারিজ নিয়েও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আপনারা শুধু সেদিনের ঘটনাক্রম ব্যাখ্যা করে আদালতে এসেছিলেন।’
নেতা-মন্ত্রীদের আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘শুধুমাত্র চিঠির ভিত্তিতে জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সুবিচার হয়নি। ধৃতদের বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, সিআরপিসি-র ৪০৭ ধারায় এভাবে জামিনের ওপর স্থগিতদাশ কি দেওয়া যায়?’
হেভিওয়েটদের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন করেন, ’আপনি বলছেন, ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নির্দেশের কপি দেখেনি?’ উত্তরে হেভিওয়েটদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, না। পাল্টা, কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, ’চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়ার আগে নির্দেশনামার কপি দেখেছি আমরা।’
এর কিছুক্ষণ পর, নারদ-মামলার শুনানি আজকের মত শেষ হয়ে যায়। মঙ্গলবার ছুটি নেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। ফলে, বুধবার ফের শুনানি হবে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে।