কলকাতা: নিউটাউন এনকাউন্টারে নতুন তথ্য। প্রকাশ্যে এল মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়র থেকে কলকাতায় গ্যাংস্টারদের পালিয়ে আসার ছবি।


গত ১৮ মে গ্বালিয়র থেকে কলকাতায় পালিয়ে আসছিল গ্যাংস্টাররা। গ্বালিয়র টোল প্লাজা পেরিয়ে যায় একটি কালো হন্ডা অ্যাকর্ড। 


উল্লেখযোগ্যভাবে, এই গাড়ির নম্বর ছিল "ডব্লিউবি ০২ আর ৪৫০০" (WB 02R 4500)।  অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট। আর এই গাড়ির নম্বরের সূত্রেই পঞ্জাবের মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার জয়পাল সিং ভুল্লারের হদিশ পায় পুলিশ।


নিউটাউনের অভিজাত আবাসনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অভিযানে বুধবার দুই মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টারের মৃত্যু হয়। যদিও পুলিশের দাবি, জয়পাল সিংহ ভুল্লার ও জসসির শেষের শুরু হয় গত ১৫ মে। 


কারণ, সেদিন খুন, অপহরণ, লুঠ, পাকিস্তান থেকে মাদক চোরাচালানের মতো গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত জয়পাল সিং ভুল্লারের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের অভিযোগ ওঠে।


পঞ্জাব পুলিশ সূত্রের খবর,  গত ১৫ তারিখ পঞ্জাবের লুধিয়ানার জগরাঁও-তে মাদক পাচার সন্দেহে একটি ট্রাক পাকড়াও করে পঞ্জাব পুলিশ। 


পঞ্জাব পুলিশের দুই অ্যাসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টর ভগবান সিং ও দলবিন্দরজিৎ‍ সিং কিছু বুঝে ওঠার আগেই, তাঁদের পিস্তল ছিনিয়ে নেয় ২ দুষ্কৃতী। 


অভিযোগ, এই দুই দুষ্কৃতী ছিল আর কেউ নয়, জয়পাল সিং ভুল্লার আর তার সঙ্গী জসসি। পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার পর দুই পুলিশ কর্মীকে গুলি করে মারে তারা।


এরপর সন্দেহজনক ট্রাকটি নিয়ে চম্পট দেয় জয়পাল আর তার ৪ সঙ্গী। পঞ্জাব পুলিশ সূত্রের দাবি,  দুই এএসআই-কে খুন করে পাঞ্জাব থেকে সটান মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে পৌঁছয় জয়পাল, জসসি, ভরত কুমার, দর্শন সিংহ ও বলজিন্দর সিংহ।


সেখানে ২ দিন আত্মগোপন করে থাকার পরই গ্বালিয়র ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় জয়পাল। পঞ্জাব পুলিশ সূত্রে দাবি,  জয়পাল সবুজ সংকেত দিতেই WB 02R 4500 নম্বর প্লেট লাগানো হন্ডা অ্যাকর্ড গাড়ি নিয়ে আসে গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য ভরত কুমার। 


দর্শন আর বলজিন্দরকে গ্বালিয়রে রেখে ১৮ তারিখ সকালে জয়পাল আর জসসিকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয় ভরত। সেই ছবিই ধরা পড়ে টোল প্লাজার ক্যামেরায়। 


কিন্তু, কিছুদূর যাওয়ার পর খারাপ হয়ে যায় গাড়ি। সেই সময় রাস্তায় নেমে পড়ে ভরত, জয়পাল আর জসসি। রাস্তার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ছবি। মেকানিক ডেকে গাড়ি সারানোর পর ১৮ তারিখ ফের কলকাতার দিকে এগোতে শুরু করে জয়পালরা। চালকের আসনে ছিল ভরত।


পুলিশ সূত্রে খবর, গ্যাংস্টার জয়পাল আর জসসিকে নিয়ে সটান নিউটাউনে পৌঁছয় ভরত। সাপুরজি আবাসনের সুখবৃষ্টি ব্লকে পৌঁছে দেওয়া হয় পঞ্জাবের দুই মোস্ট ওয়ান্টেডকে। এরপর ভরত ওই গাড়ি নিয়ে ফিরে যায় পঞ্জাব। 


এরইমধ্যে জয়পালকে ধরতে ‘অপারেশন জ্যাক’ নামে অপারেশন শুরু করে পঞ্জাব পুলিশ। গত ২৮ মে গ্বালিয়রের গোপন ডেরা থেকে জয়পাল গ্যাংয়ের দুই সদস্য দর্শন সিংহ আর বলজিন্দর সিংহকে গ্রেফতার করে পঞ্জাব পুলিশ।


সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে কালো হন্ডা অ্যাকর্ডের খোঁজ শুরু হয়। তথ্য-তালাশ করে উঠে আসে পঞ্জাবের গ্যাংস্টারের গাড়ির কলকাতা কানেকশন। কারণ, কালো হন্ডা অ্যাকর্ডের রেজিস্ট্রেশন ছিল গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের এক সংস্থার নামে। 


এরই মধ্যে বুধবার সকালে পঞ্জাবের সম্বুর বর্ডার এলাকার রাজপুরায় গাড়ি-সহ ধরা পড়ে যায় ভরত। ভরত কুমারের গ্রেফতারির পর যে সূত্রে জানা যায়, ৬ বছর আগে বিক্রি করে দেওয়া হয়, কিন্তু নাম ট্রান্সফার হয়নি। 


মাদক রাকেট চক্রের অন্যতম পাণ্ডা ভরতকে জেরা করে পঞ্জাব পুলিশ জানতে পারে,  জয়পালরা লুকিয়ে আছে কলকাতায়। নিউটাউনে সাপুরজি আবাসনের সুখবৃষ্টি বি ব্লকের ২০১ নম্বর ব্লকের সেই ফ্ল্যাটের তথ্যও উগরে দেয় ভরত।


পাঞ্জাব পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে এই তথ্য জানায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফের হাতে। বিন্দুমাত্র দেরি না করে, দুই গ্যাংস্টারকে ধরকে সাপুরজি আবাসনে হাজির হন এসটিএফ অফিসাররা। তারপর গুলির লড়াইয়ে খতম দুই মোস্ট ওয়ান্টেড।


 


 


New Town Encounter, New Town Encounter updates, Punjab Govt on New Town Encounter, Encounter in New Town