দীপক ঘোষ, কলকাতা: মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ও নারায়ণ আপ্তের মৃত্যুদিবস পালন করল হিন্দু দর্পণ নামে একটি সংগঠন। আয়োজকদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। অনুষ্ঠানের সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূলও। এই নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ করেছে বামেরা। যদিও এই অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব রেখেছে বিজেপি।
গাঁধীর দেশে গডসের প্রশস্তি। যা এতদিন দেখা যেত গো বলয়ের রাজ্যে, তাই এবার বাংলায়। কলকাতার বুকে ঘটা করে মহত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ও নারায়ণ আপ্তের মৃত্যুদিবস পালন করল গেরুয়া শিবির।
১৯৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীন হচ্ছে...তখন দেশভাগের বিষাদে মগ্ন গাঁধীজী...এই কলকাতাতেই ছিলেন! নীরব! অবসন্ন! অনশনরত!সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে উত্তপ্ত শহরকে শান্ত করেছিলেন তিনি।আর তাঁর সেই প্রিয় কলকাতাতেই এবার তাঁর হত্যাকারীর মৃত্যুদিবস পালিত হল!সাড়ম্বরে!বাংলার বুকে যা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে।
গাঁধীজীকে হত্যা করার অপরাধে, ১৯৪৯ সালের ১৫ নভেম্বর ফাঁসি হয়েছিল গডসে ও নারায়ণ আপ্তের।সেই দিনটিকে বউবাজারের ভারত সভা হলে বীর শহিদ দিবস হিসেবে পালন করল হিন্দু দর্পণ নামে একটি সংগঠন।
জাতির জনকের হত্যাকারীদের মৃত্যুদিবস পালনকারীদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেফতার করা হোক। সেই সঙ্গে কীভাবে ওই সংগঠন অনুমতি পেল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
বামেরা আবার, এই অনুষ্ঠানের পিছনে তৃণমূলের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের আঁতাতের ইঙ্গিত পাচ্ছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, এটা হল কী করে? বামফ্রন্টের আমলে এগুলি হত না, সাহসই পেত না। এখন পাচ্ছে কী করে?
যদিও হিন্দু দর্পণের এদিনের অনুষ্ঠানের সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূলও। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, যে কোনও মৌলবাদেরই বিরোধিতা করা দরকার।এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়।
গডসের মৃত্যুদিবস পালনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিগত বিধানসভা নির্বাচনে বালিগঞ্জ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। যদিও, দল হিসাবে বিজেপি এ ধরনের অনুষ্ঠানকে সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ ।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, আমরা এটাকে সমর্থন করি না। অনেক লোক খুঁজে পাওয়া যাবে যারা মিরজাফরকেও সমর্থন করে। কারা করেছে জানি না। লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় কেন উপস্থিত ছিলেন, তাঁকেই জিজ্ঞাসা করুন।
আজ থেকে ৭৩ বছর আগে যখন গাঁধীজিকে হত্যা করেছিল নাথুরাম গডসে।তখন জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ভারতীয় জীবন থেকে দীপশিখা নিভে গেল।
সেই ভারতেই এখন গাঁধীর হত্যাকারীর মৃত্যুদিবস পালিত হচ্ছে। তাও আবার ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত এই বাংলায়। যার সঙ্গে নিজের আত্মিক যোগ বোঝাতে গিয়ে, মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধী একবার বলেছিলেন, যদিও আমি গুজরাতি, কিন্তু যেহেতু আমি একজন ভারতীয়, তাই আমি বাঙালিও।সেই বাংলার বুকেই পালিত হল গাঁধীজির হত্যাকারীদের মৃত্যুদিবস।