সমিত সেনগুপ্ত, কলকাতা: ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রী পামেলা গোস্বামী ও তাঁর দুই সঙ্গীকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। ভোটের মুখে কোকেন-যোগের অভিযোগে তাঁর গ্রেফতারি তীব্র অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপিকে। শনিবার আদালতে তোলার সময় বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সেই যুব মোর্চার নেত্রী পামেলা গোস্বামী। শাসক দল নয়, মাদককাণ্ডে পামেলা সরাসরি নিশানা করলেন তাঁরই দলের বাহুবলী নেতা রাকেশ সিংহ-কে! পামেলা গোস্বামী জানান, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ঘনিষ্ঠ রাকেশ সিংহ যাতে অ্যারেস্ট হয়৷ এদিকে, এসব কিছুর পিছনে তৃণমূল ও কলকাতা পুলিশের ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন রাকেশ সিংহ।


শুক্রবার নিউ আলিপুরের এনআর অ্যাভিনিউতে, বিজেপির যুব মোর্চার সম্পাদক পামেলা গোস্বামী এবং তাঁর সঙ্গী, বিজেপি নেতা প্রবীরকুমার দে-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে ৯০ গ্রাম কোকেন বাজেয়াপ্ত হয় বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। গ্রেফতারির পরই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন পামেলা। শনিবার সকালে পুলিশ-প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে চক্রান্তের তত্ত্ব খাড়া করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতিও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দোষী কিনা আইন ঠিক করবে, তবে এভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা হলে আন্দোলন করব ৷’’ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মতে, বিজেপি কোনও ভদ্র লোক করে না, সুস্থ লোক করে না, চোর, চরিত্রহীন, পরকীয়ারাই করে ৷’’


দিলীপ ঘোষ ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, আলিপুর আদালত চত্বরে দলীয় সহকর্মী রাকেশ সিংহের বিরুদ্ধেই চক্রান্তের অভিযোগ তোলেন পামেলা। বন্দর এলাকার বিজেপি নেতা রাকেশকে বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ঘনিষ্ঠ বলেও তিনি দাবি করেন। তবে দলের যুব নেত্রীর এসমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, এসব কিছুর পিছনে তৃণমূল ও কলকাতা পুলিশের ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন রাকেশ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ তদন্ত করছে, সিআইডি-সিবিআই তদন্ত করুক, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ডাকুক। গতকালের ঘটনা, আর আজ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বোঝানো হচ্ছে। এটা তৃণমূল ও কলকাতা পুলিশের কাছে নতুন কিছু নয়। মনে হচ্ছে ওকে দিয়ে বলানো হয়েছে। অভিষেক বা তৃণমূল বা কলকাতা পুলিশ মাইন্ড ওয়াশ করেছে। আমি ওখানে কোথা থেকে এলাম? ভূত হয়ে এলাম? দেড় বছর কোনও যোগাযোগ কথা নেই ৷’’


পামেলা-রাকেশের বিবাদ নিয়ে আবার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আগে থেকে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা থাকতে পারে। তবে কোনওরকম চক্রান্ত হলে ছাড়ব না ৷’’ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মতে, ‘‘ফেসবুকে যাদের ছবি রয়েছে আদি-নব্য সব নেতার ছবি। পামেলার তো তৃণমূল বা পুলিশের কথাই বলা উচিত যদি ষড়যন্ত্র থাকে। স্পেসিফিক নাম কেন নিলেন? রাকেশ তো বাঁচতে একথা বলবেই। কার সঙ্গে কী যোগ সেটা পামেলাই বলতে পারবে ৷’’




গত বছর বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে, অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু এবং তার তদন্তে উঠে আসা মাদক-যোগের অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের রাজনীতি। এবার ভোটমুখী বাংলাতেও সেই মাদককাণ্ডের ছায়া। দলের যুব নেত্রীর গ্রেফতারি এবং তাঁর মুখে আরও এক নেতার নাম উঠে আসায় বঙ্গ বিজেপির অন্দরে অস্বস্তিকর পরিবেশ।