কলকাতা : পঞ্চাশ বছরের পরিষদীয় কেরিয়ারে দাঁড়ি টেনে পছন্দের 'প্রিয়দা'-র মতোই 'না ফেরার দেশে' চলে গেলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ক্যাওড়াতলায় সম্পন্ন হল শেষকৃত্য। রবীন্দ্রসদন থেকে বিধানসভা, আজ দল-মত নির্বিশেষে সকলে হাজির হয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শেষশ্রদ্ধা জানাতে। তাঁর শেষযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঘুচে গেল শাসক-বিরোধী ব্যবধানও।


অবিভক্ত বর্ধমানের নাদনঘাট থেকে যাত্রা শুরু। অবশেষে সেই পথ চলা শেষ হল। যাওয়ার আগে ছুয়ে গেলেন 'প্রিয়' সব কিছু। সেই বিধানসভা, বালিগঞ্জের ফ্ল্যাট, একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব-যার আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অজস্র স্মৃতি । 


প্রিয়-সুব্রত-সোমেন । বঙ্গ রাজনীতির ত্রি মাস্কেটিয়ার্সের বাকি দুজন ইহলোক ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আগেই। এবার চলে গেলেন শেষজনও। সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। আলোর উত্‍সবের রাতেই বাংলার রাজনীতিতে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। গতকাল রাত ৯টা ২২-এ এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় সুব্রতর। 


বৃহস্পতিবার রাতেই SSKM থেকে প্রয়াত রাজনীতিকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পিস ওয়ার্ল্ডে। পিস ওয়ার্ল্ড থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্রসদনে। সেখানে একে একে এসে পৌঁছন তাঁর গুণমুগ্ধ, অনুরাগীরা। ব্যক্তিজীবনে সব রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এলেন সকলে। তাঁর শোকযাত্রায় মিলে মিশে গেল সব রাজনীতির রং! এলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্টরা।


রবীন্দ্রসদন থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায়। ১৯৭১ সালে প্রথমবার মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিধানসভায় পা রেখেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেই বিধানসভার পোর্টিকোতে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান শাসক-বিরোধী সব দলের নেতা-বিধায়করা। শেষ শ্রদ্ধা জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রয়াত নেতাকে বিদায় জানাতে আসেন রাজ্যপাল। দুপুর আড়াইটের সময় প্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে। এরপর গন্তব্য একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাব। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রাণ-প্রিয় ক্লাবের কালীপুজোর মণ্ডপেই রাখা হয় তাঁর মরদেহ। কাতারে কাতারে মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিকেল ৩.৩৫ নাগাদ একডালিয়া থেকে শোক মিছিল এগোয় ক্যাওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে। ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমার, মদন মিত্র থেকে সুজিত বসু-সহ আরও অনেকে।


কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পৌঁছয় প্রয়াত রাজনীতিকের মরদেহ। মিনিট দশেক পরে সেখানে পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষশ্রদ্ধা জানান। ৪.৩৭ নাগাদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সম্মানে গান স্যালুট দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া। মুখাগ্নি করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্নে। এর সাথে সাথে শেষ হয়ে গেল বঙ্গ-রাজনীতির একটা অধ্যায়।