কলকাতা:  সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা যোগ দিলেন তৃণমূলে। শাসক দলে মিশে গেল শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে বিষপানকারী ৫ শিক্ষিকা-সহ ২ হাজার শিক্ষিকা আজ তৃণমূলের যোগ দিয়েছেন। সংগঠনের লক্ষাধিক সদস্যই শাসক দলে, দাবি শিক্ষক সংগঠনের। 


মাস তিনেক আগে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের পাঁচ শিক্ষিকা। বিক্ষোভের সময় বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন তাঁরা। সে দিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ চালান। রবিবার তৃণমূলে যোগ দিলেন ওই পাঁচ জন। এদিন ব্রাত্য বসুই তাঁদের হাতে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে দেন।


সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে বিষপানকারী শিক্ষিকারা শেষমেষ তৃণমূলে   (TMC) যোগ দিচ্ছেন। কথা তেমনই ছিল। আজ রবিবার ডায়মন্ডহারবারে যোগদান অনুষ্ঠান হয়। ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের সভাতেই যোগ দেন শিক্ষক নেতা মইদুল ইসলামও (Maidul Islam)।


গত ২৪ অগাস্ট বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মাঝে হঠাৎই ‘বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা’ করেন ৫ শিক্ষিকা। যে পাঁচ শিক্ষিকা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার (Suicide) চেষ্টা করেছিলেন, তারা সকলেই পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্য। বদলি-সহ একাধিক দাবি নিয়ে বিকাশ ভবনের (Bikash Bhawan) সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের সদস্য। আন্দোলন চলাকালীন বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে। ধস্তাধস্তিতে বিকাশ ভবনের মূল ফটক টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েন ওই পাঁচ শিক্ষিকা। এরপরই কার্যত সকলকে অবাক করেই হাতে থাকা বোতল থেকে বিষ খেতে শুরু করেন তাঁরা। যা দেখতে পেয়ে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে ওই পাঁচ শিক্ষিকাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে তাদের বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে (Bidhannagar Sub-Divisional Hospital) নিয়ে যাওয়া হয়। ৩ শিক্ষিকাকে নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএস হাসপাতালে (NRS Hospital)। 


বিকাশ ভবনের সামনে যে সব শিক্ষিকা বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, সেই সব আন্দোলনরতদের ‘বিজেপি ক্যাড্যার’ বলেও চিহ্নিত করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এ দিন দুপুরে একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি তেমনই মন্তব্য করেন। পাশাপাশি, ওই পাঁচ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে। তাঁরা সকলেই বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 


এরপর ওই শিক্ষিকারা অভিযোগ করেন বিক্ষোভ-প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জেরে তাদেরকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অনেকেই চুক্তিভিত্তিক শিক্ষিকা। তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের উৎসশ্রী পোর্টাল চালুর পর থেকে বদলির যে সমস্ত সমস্যা বেড়েছে। যদিও এই প্রথম নয়, শিক্ষকদের (Teacher) বেতন বৈষম্য, বদলি-সহ একাধিক দাবিতে কখনও নবান্নে, কখনও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) বাড়ির সামনে তো কোনওদিন বিকাশ ভবনের সামনে একাধিকবার বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যরা। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মইদুল ইসলাম। বিধাননগরে একাধিকবার আন্দোলন অনশনে বসেছে এই সংগঠন। নিজেদের দাবি নিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন শিক্ষকরা। সেই শিক্ষকই এবার তৃণমূলে।