সমিত সেনগুপ্ত, কলকাতা: তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকারও বাংলার সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজ্য সরকার বিক্রি করতে পারছে না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্পর্কে অভিযোগ থাকলে আদালতকে জানাক তৃণমূল। বিজেপি প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি করে না। বিজেপি কখনও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করেনি। রাজ্যের তৃণমূলত্যাগী নেতারা প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। টিকাকরণের নিরিখে বাংলা দেশের মধ্যে নিচের সারিতে। তৃণমূল সংসদীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ভাষা-সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল।’


এর আগে আজ বিজেপিকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘আগামীদিনে আমাদের লড়াই অনেক বড়। ত্রিপুরায় তৃণমূল সংগঠন শুরু করায় পায়ের তলায় মাটি সরেছে বিজেপির। হিম্মত থাকলে, বিজেপি তৃণমূলকে আটকে দেখাক। ইডি-সিবিআই দিয়ে ধমকে-চমকে কিছু হবে না। যে রাজ্যে বিজেপি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, সেখানে তৃণমূল লড়বে। পারলে আটকে দেখাক বিজেপি, চ্যালেঞ্জ রইল। বিজেপি-শাসিত রাজ্য ছিনিয়ে আনবে তৃণমূলত্রিপুরায় দুয়ারে গুন্ডা নয়, দুয়ারে সরকার যাবে। ত্রিপুরায় স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী শুরু হতে চলেছে। শেষ বিন্দু পর্যন্ত ত্রিপুরায় দলীয় কর্মীদের পাশে থাকব। লড়াইয়ের জন্য তৈরি থাকুক দলীয় কর্মীরা। পরিষেবা পেতে সিপিএম-কংগ্রেস সবাই আসুন।’


বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে আমাদের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। দিল্লি আমাদের সঙ্গে না পারলে এজেন্সি লাগিয়ে দেয়। রাজনীতিতে এঁটে উঠতে না পারলে, এজেন্সিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। গুজরাতে কোভিড-মৃত্যুর যা হিসেব দেওয়া হয়েছে, তা সন্দেহজনক। ‘গোটা দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেশের পবিত্র মাটি কখনও বিক্রি হয়? এবার মানুষকে চোখ-নাক-জিভ বিক্রি করতে বলবেন। স্টেশনে প্ল্যাকার্ড দিন, লিখুন, রেল বিজেপির জায়গা নয়। প্রচারে আসানসোলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা উঠেছেন কয়লা মাফিয়াদের হোটেলে। মনে রাখুন অমিত শাহ, এটা চলতে পারে না। অভিষেকের সঙ্গে পারলে রাজনৈতিক লড়াই লড়ো। একটা ইডি দেখালে, আমিও বস্তা ভরে তথ্য দেব। কিছু না হলে আমরাও আদালতে যাব। এত প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি আমি আগে দেখিনি। কয়লা চুরিতে শুধু তৃণমূলকে ধরলে হবে? কয়লা কেন্দ্রের বিষয়, রাজ্যের নয়। বিজেপি নেতাদের নিয়ে কেন সিবিআই তদন্তে যাচ্ছে? সব কমিশনকে পলিটিক্যাল বানানো হচ্ছে। অন্যায় করলে আমি তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতার করি। আমি বিজেপি নই। সাংসদ-ভাতা নিই না, আমার পরিবারের উপর আঙুল? পিএম কেয়ার্সে কী করে টাকা আসে, জানতে চাই। সংসদ ভবন বানানোর টাকা আছে, অথচ ভ্যাকসিনের টাকা নেই! ডিজেল-পেট্রোল-গ্যাসের দাম এত বাড়িয়েছেন, টাকা কোথায় গেল? বিশ্বভারতীর বোর্ড মেম্বার সব বিজেপির। রাজ্যপালের কথা না মানলেই ব্ল্যাকমেলিং। ফাইল সই করতে চান না রাজ্যপাল। বিজেপি খালি গুলি চালায় আর গালি দেয়। জোট বাঁধুন, তৈরি থাকুন। বিজেপির কাছে কোনওদিন মাথা নোয়াব না। মুখ খুললেই দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে। কেন ভারতীয়দের আফগানিস্তান থেকে ফেরানো সুনিশ্চিত করা হয়নি? ইউপিএসসি পরীক্ষায় যিনি প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। জনগণকে দিয়ে ফাঁকি, চলবে না এত চালাকি। মানুষের আয়নায় দেখা যাচ্ছে বিজেপির ভবিষ্যত্‍।’


মমতা ও অভিষেকের এই আক্রমণেরই জবাব দিলেন শমীক। তিনি পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন। শমীক বলেন, ‘ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্ত হচ্ছে আদালতের নির্দেশে। তদন্ত নিয়ে সহযোগিতা চাইলে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সাহায্য করবে বিজেপি।’


ত্রিপুরা নিয়ে অভিষেকের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে শমীক বলেছেন, ‘ত্রিপুরা জয়ের স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল, স্বপ্ন দেখা ভাল। ত্রিপুরায় খাতা খুলে দেখাক তৃণমূল।’