পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের আকাশস্পর্শী সাফল্য উদযাপনের দিন। কোনওকিছুতেই পিছিয়ে নেই মহিলারা। কলকাতা পুলিশেও তার ব্যতিক্রম নয়। অদম্য মনোবল, আর কর্তব্যবোধের মিশেল ঘটেছে কলকাতা পুলিশের প্রমীলা বাহিনী উইনার্সের তিন সদস্যের জীবনেও। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরম স্নেহ-মমতায় বাড়িও সামলান তাঁরা।  ছোটবেলা থেকেই পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা ছিল।আর সেই ইচ্ছার জোরেই শহরে 'রোমিও'দের শায়েস্তা তো করেনই, সেইসঙ্গে সংসারের যাবতীয় দায়দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিতে পিছপা হন না তাঁরা।  লকডাউনে সংকটে পড়া সংসারের হালও ধরেছেন তাঁরা।


এই তিন কন্যা প্রত্যেকেই জেলা থেকে উঠে এসেছেন। পুলিশের উর্দি পরার স্বপ্নটা তাঁদের ছিল একেবারেই ছোট থেকে। কোনও কিছুই সেই স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে উঠতে পারেনি।


 


তাঁরা নিজেরা মেয়ে। তাই মেয়েদের নিরাপত্তার দিকটা স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভালো বোঝেন। কলকাতা পুলিশের কাজ তাঁদের কাছে নিছক চাকরি নয়। যে স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছিলেন, পুলিশের উর্দি পরে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য ও দায়িত্ব।


 


কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষিত প্রমিলা বাহিনী উইনার্সে যোগদান করে সেই লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়েছেন তাঁরা। ২০১৮-তে চাকরিতে  যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা।  কিন্তু  দুই বছর পর  করোনাভাইরাসজনিত লকডাউন সংক্রান্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কাজ হারালেন পরিবারের সদস্যরা। তখন ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’-র মতোই হাল ধরলেন সংসারেরও।




মিতা মাহাতো

তাঁদের একজন মিতা মাহাতো খড়্গপুরের বাসিন্দা। কলকাতা পুলিশের যোগ দেন ২০১৮- তে। সব ঠিক চলছিল। স্বামী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। ছেলে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালাচ্ছিল। করোনাকালে চাকরি চলে গেল স্বামীর। কি হবে গোটা সংসারের?  তখন গোটা সংসারের হাল ধরলেন মিতা।




মামনি বানু


একই রকম প্রায় পরিস্থিতি হয় কোচবিহারের মামনি বানুরও।স্বামী ও শ্বশুরমশাইয়ের যৌথ কারবার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেল করোনা-কালে।তাতে কী! মামনি সমস্ত দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে।




প্রিয়ঙ্কা অধিকারী


প্রিয়ঙ্কা অধিকারীর  বাবা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। দুই ভাই পড়াশোনা করে। মা-বাবা, দুই ভাইয়ের সব দায়িত্ব নিতে পেরে খুব খুশি প্রিয়াঙ্কা।



এই তিনজনের প্রত্যেকেই প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছেন। শুধুমাত্র চোখে স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। আজ তাঁরা কলকাতা পুলিশের অন্যতম স্তম্ভ।



সাধারণ মহিলা পুলিশদের থেকে একেবারে অন্যরকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই বাহিনীকে। সাদা ইউনিফর্ম, হ্যান্ড গ্লাভস, হাঁটুতে গ্লাভস, ম্যান প্যাক, বডি ক্যামেরা, হেলমেট, টু হুইলার নিয়ে শহরের  এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়ায় তাঁদের চোখ।



উইনার্স কলকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা টহলদারি দল। যারা দৈনন্দিন রাস্তাঘাট, পার্ক, শপিংমল ,বাজার এই সকল জায়গায় বিশেষ নজর রেখে চলে। মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটলেই নজর এড়ায় না উইনার্স এর প্রমিলা বাহিনীদের। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে স্কুটার নিয়ে তারা নজর রাখেন স্কুল-কলেজ, হোটেল -রেস্তোরাঁ, পার্ক- শপিং মল, নাইট ক্লাব এর আশেপাশে। তাঁদের সতর্ক নজর থাকে অপরাধী ধরতে, অপরাধ আটকাতে। ইভটিজিং বা মহিলাদের উত্ত্যক্ত করলেই হাতেনাতে পাকড়াও করার লক্ষ্য নিয়ে রাখে এই দল।
প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, তাঁরা যেহেতু নারী।ফলে নারীদের প্রতি অপরাধ আটকাবার যে দায়িত্ব কাদের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেই কাজ সামলানো তাদের যেমন মূল লক্ষ্য,পাশাপাশি,সংসারের হাল সামলানোও অন্যতম দায়িত্ব।