নয়াদিল্লি: দলে থেকেও বেশ কিছু দিন ধরেই বেসুরো বাজছেন তিনি। এবার আরও একধাপ এগিয়ে কংগ্রেসের বিরাগভাজন হলেন, দলের তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী তারুর। বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে শুধুমাত্র শুভেচ্ছাই জানাননি তিনি, সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লে, আডবাণীর হয়ে সওয়ালও করেছেন। তবে বিষয়টি যে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না তাঁর দল, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। তারুরের মন্তব্য থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। (Shashi Tharoor)
আডবাণীর ৯৮তম জন্মদিনে সম্প্রতি বর্ষীয়ান নেতাকে শুভেচ্ছা জানান তারুর। আডবাণীর সঙ্গে পুরনো একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘জনসেবার প্রতি ওঁর অটল অঙ্গীকার, বিনয় ও শালীনতা বোধ এবং আধুনিক ভারতের গঠনে ওঁর ভূমিকা মোছা যাবে না। একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়ক, যাঁর সেবামূলক জীবন সকলকে অনুপ্রেরণা জোগায়’। (Lal Krishna Advani)
কিন্তু তারুরের ওই পোস্ট ঘিরে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। এমনকি অভিজ্ঞ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ের সঙ্গে তর্কাতর্কিও শুরু হয় তারুরের। সঞ্জয় লেখেন, ‘মিস্টার তারুর, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ‘দেশের মাটিতে ঘৃণার বীজ বপন করা’ (খুশওয়ন্ত সিংহের উক্তি অনুযায়ী) জনসেবা নয়’। ১৯৯০ সালে আডবাণীর ‘রথযাত্রা’র দিকে নির্দেশ করেই ওই মন্তব্য করেন আইনজীবী সঞ্জয়, যার দরুণ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছিল।
যদিও এতে পাল্টা যুক্তি দিয়ে তারুর লেখেন, ‘ওঁর দীর্ঘ কর্মজীবনকে শুধুমাত্র একটি পর্বে নামিয়ে আনা, সেটি যত তাৎপর্যপূর্ণই হোক না কেন, তা অন্যায়। নেহরুজির সামগ্রিক কর্মজীবনকে যেমন চিনের কাছে ধাক্কা দিয়ে বিচার করা যায় না, ইন্দিরা গাঁধীকে যেমন শুধুমাত্র জরুরি অবস্থা দিয়ে বিচার করা যায় না। আমার মনে হয় আডবাণীজির প্রতি সৌজন্য প্রদর্শন করা উচিত আমাদের’।
তারুরের এই মন্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া হতে সময় লাগেনি। কংগ্রেসে থেকেও আডবাণীর প্রশংসার নেপথ্যে বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেন কেউ কেউ। বাবরি মসজিদ পর্বকে লঘু করে দেখানোর অভিযোগও তোলেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের তরফে তারুরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো হয়েছে। দলের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, “বরাবরের মতোই শশী তারুর নিজের মতামত জানিয়েছেন, যার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই। তাঁর ওই মন্তব্য থেকে কংগ্রেস নিজেকে দূরে রাখছে। কংগ্রেসের সাংসদ এবং ওয়র্কিং কমিটির সদস্য থেকেও যে এসব করতে পারছেন উনি, তাতে কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক এবং উদার মনোভাবই প্রকাশ পাচ্ছে’।
তারুরের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক যে আগের জায়গায় নেই, তা নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে বিগত কয়েক মাস ধরেই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে থাকা হোক বা মোদির প্রশংসা করা, দলকে টপকে ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে বিদেশ সফরে যাওয়া, এসবে জেরে দূরত্ব বেড়েছে বলে জোর গুঞ্জন লুটিয়েন্স দিল্লিতে। সম্প্রতি রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেন তারুর, যাতে নেহরু-গাঁধী পরিবারের উল্লেখ টানেন। সেই নিয়ে বিজেপি-র তরফে জোর প্রচারও চালানো হয়। আর তার পরই আডবাণীর প্রশংসা এবং নেহরু-ইন্দিরার সঙ্গে তুলনা করে এই মন্তব্য। তাই প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেসের বিরাগভাজন হয়ে বিজেপি-র প্রতি কি নরম হচ্ছেন তারুর? দল বা তারুর নিজে সে নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি।