পটনা: নিজের ছেলেকেই এবার দলথেকে বহিষ্কার করলেন লালুপ্রসাদ যাদব। বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) থেকে বহিষ্কার করলেন লালু। এমনকি পারিবারিক সম্পর্কও ছিন্ন করলেন। আগামী ছ'বছরের জন্য তেজপ্রতাপকে বহিষ্কার করেছেন লালু।  জানিয়েছেন, তেজপ্রতাপ নীতিবোধ এবং মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত জীবনে এই অবক্ষয়ের দরুণ সামাজিক ন্যায়ের লড়াইকেও ছেলে দুর্বল দিচ্ছেন বলেও দাবি করেছেন লালু। (Lalu Prasad Yadav)

রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্তের কথা সকলকে জানান লালু। তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে নৈতিক মূল্যবোধকে অবহেলা করলে, সামাজিক ন্যায়ের সার্বিক লড়াইও দুর্বল হয়ে পড়ে। জ্য়েষ্ঠপুত্রের গতিবিধি, আচরণ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আচরণ আমাদের পারিবারিত মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। এমন পরিস্থিতিতে ওকে পরিবার ও দল থেকে দূর করলাম। এখন থেকে পরিবার এবং দলে ওর কোনও ভূমিকা থাকবে না। ছ’বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হল’। (Tej Pratap Yadav)

লালু আরও লেখেন, ‘নিজের জীবনের ভাল-মন্দ, দোষ-গুণ সব বোঝার ক্ষমতা রয়েছে ওর। যে বা যাঁরা ওঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন, তাঁরা নিজের মতো করে শুনে সিদ্ধান্ত নিন। আমি জনসমক্ষে বরাবর ভদ্রতা বজায় রেখেছি। পরিবারের অনুগত সদস্যরা এই নীতি মেনেই চলেন’।

এমনিতে তেজপ্রতাপকে নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থেকেছে RJD-র অন্দরে। কিন্তু লালু হঠাৎ করে ছেলের প্রতি এত রুষ্ট কেন হলেন? এর নেপথ্যে তেজপ্রতাপের সাম্প্রতিক কিছু কাজকর্মকে তুলে ধরছেন দলের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি তেজপ্রতাপের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুষ্কা যাদব নামের এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর ছবি পোস্ট করা হয়। লেখা হয়, 'আমি তেজপ্রতাপ যাদব। আমার সঙ্গে যিনি আছেন তিনি অনুষ্কা যাদব।  ১২ বছর ধরে পরস্পরকে চিনি আমরা, গভীর ভাবে ভালবাসি একে অপরকে। এত বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক। সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছিলাম, কিন্তু সঠিক শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আজ এই পোস্টের মাধ্যমে মনের জানলা খুলে দিলাম। আশাকরি আপনারা বুঝবেন'। 

পরে যদিও পোস্টটি মুছে দেওয়া হয়, কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। বিহারের রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, অনুষ্কার সঙ্গে যদি ১২ বছর ধরে সম্পর্কই থাকে, তাহলে ২০১৮ সালে প্রাক্তন  RJD নেতা চন্দ্রিকা রাইয়ের মেয়েকে কেন বিয়ে করেছিলেন তেজপ্রতাপ। বিয়ের কয়েক মাস পরই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তেজপ্রতাপের। সেই সময়ও বিস্তর শোরগোল হয়েছিল। জোর করে তেজপ্রতাপকে বিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসগ্রহণের পথেও বেরিয়ে পড়েন তেজপ্রতাপ। সেই টানাপোড়েনের মধ্যে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতি হয় RJD-র। চন্দ্রিকা দল ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরবর্তীতে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলে যোগ দেন। তাই তেজপ্রতাপের প্রোফাইল থেকে করা ওই পোস্ট নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলে দলকে। বিশেষ করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে সকলে যখন ব্যস্ত, তেজপ্রতাপ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেন কী করে, ওঠে প্রশ্ন।

বিতর্ক শুরু হতে তেজপ্রতাপ জানান, তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছি। কিন্তু বিষয়টি যে মোটেই ভাল ভাবে নেননি তাঁরা, তা বুঝিয়ে দেন ভাই তেজস্বী যাদব। তিনি বলেন, "আমরা কাজ করছি। বিহারের প্রতি নিবেদিত আমরা। মানুষের সমস্যা শুনছি। দাদার কথা উঠলে বলতে পারি, রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবন আলাদা। ব্যক্তিগত জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে ওঁর। উনি প্রাপ্তবয়স্ক, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন।" কিন্তু দলের স্বার্থ জড়িয়ে যেখানে, সেখানে এই ধরনেরআ চরণ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানান তেজস্বী।