কলকাতা:সালটা ১৮৫৭। সিপাহী বিদ্রোহের (sepoy mutiny) (মতান্তরে মহাবিদ্রোহ) আগুনে তেতে উঠল ব্রিটিশ শাসিত-ভারতের (british ruled india) বড় অংশ। ঝলসে উঠল ঝাঁসির রানি লক্ষ্মী বাইয়ের তলোয়ার। সেই শুরু। তার পর সময় যত এগিয়েছে, ঔপনেবেশিক শাসন থেকে মুক্তির (freedom) আকাঙ্খা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের (freedom fighters) তালিকায় সংযোজিত হয়েছে রানি লক্ষ্মীবাইয়ের মতো আরও বহু বীরাঙ্গনার (women freedom fighters) নাম। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে আরও এক বার ফিরে দেখা সেই নারীদের...


রানি লক্ষ্মীবাই: ১৮৫৭-১৮৫৮। সিপাহী বিদ্রোহের আঁচ তখন তুঙ্গে। শত্রুরা ঝাঁসির দুর্গ তখন চার দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। শত্রুপক্ষের সেনাসংখ্যাও  ঢের বেশি। তবু হাল ছাড়লেন না রানি লক্ষ্মীবাই। লড়ে গেলেন টানা। তবে শেষরক্ষা হয়নি। রণক্ষেত্রেই বীরের মৃত্য়ু হয়েছিল তাঁর।


অরুণা আসফ আলি: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তখন পুরোদমে চলছে। দেশের তরুণ-সমাজ তখন ঔপনেবেশিক শাসনের থেকে মুক্তির জন্য প্রাণ দিতে তৈরি।  সেই সময়ই রাজনীতিতে এলেন অরুণা আসফ আলি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর অবদানের কথা মাথায় রেখে তাঁকে'Grand Old Lady of Indian Independence' বলা হয়। ১৯৪২ সালে 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' যখন তুঙ্গে, তখন বম্বের (এখন মুম্বই) গোয়ালিয়ার ট্যাঙ্ক ময়দানে দেশের জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন নির্ভীক অরুণা ।


সরোজিনী নাইডু: ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট ছিলেন সরোজিনী নাইডু। ১৯২৭ সালে সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অংশগ্রহণকারীও ছিলেন। অহিংস আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে ১৯২৮ সালে আমেরিকায় যান। মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধী তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘Nightingale of India’। সরোজিনী নাইডুর কবিতার বিশেষ শৈলিকে সম্মান জানাতেই এই শিরোপা।


ম্যাডাম ভিকাজি কামা:প্রগতিশীল পার্সি পরিবারের সদস্য ভিকাজি রুস্তম কামার জন্ম কলকাতায়। ব্রিটিশের কাছে দেশের স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন নির্ভীক ভাবে। ১৯০৭ সালের ২২ আগস্ট, জার্মানির স্টুটগার্টে ইন্টারন্যাশনাল সোশালিস্ট কনফারেন্সে দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। 


অ্য়ানি বেসান্ত: ভারত ও আয়ারল্যান্ড, দুজায়গাতেই স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের দাবিতে সরব ছিলেন ব্রিটিশ সোশ্যালিস্ট অ্য়ানি বেসান্ত। ১৮৯৩ সালে এ দেশে প্রথম বার আসেন তিনি। তার পর পাকাপাকি ভাবে এখানেই থেকে যান, যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯১৬ সালে ইন্ডিয়ান হোমরুল লিগ তৈরি করেন অ্যানি। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল। 


কল্পনা দত্ত:চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে আরও যে কজনের নাম উঠে আসে, তার মধ্যে অন্যতম কল্পনা দত্ত।  একটি রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৩১ সালের মে মাসে তাঁর সঙ্গে মাস্টারদার সাক্ষাৎ হয়।ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে কল্পনার এক বিশেষ ভূমিকা ছিল। শোনা যায়, বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট-বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।


প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার: ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহিদ হিসেবে যাঁর নাম উচ্চারিত হয়, তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।  ১৯৩০-এ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনেরও অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। তবে ব্রিটিশদের হাতে মরতে রাজি ছিলেন না এই বীরাঙ্গনা। তাই শেষ পর্যন্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নেন।
তালিকাটা অবশ্য এত ছোট নয়। অনেকের নাম হয়তো ইতিহাসের পাতায় খুঁজেও পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাঁরা আছেন। স্বাধীন ভারতের পরতে পরতে...


আরও পড়ুন:বাংলার স্পিনারদের অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পেতে পারেন রাজু