লন্ডন: অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভে এবার উত্তাল হল ইংল্যান্ড। বিদেশিদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলেন প্রায় ১ লক্ষ মানুষ। ‘দেশ পুনরুদ্ধার’ করতে হবে বলে হাঁক দিলেন। আর সেই বিক্ষোভের আগুনে কার্যতই ঘি ঢাললেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ভার্চুয়াল ভাষণে বিক্ষোভকারীদের কার্যত তাতালেন তিনি। ইলনকে বলতে শোনা গেল, ‘হয় প্রত্যাঘ্যাত করো, নয় মরো’। আগামী দিনে হিংসা যে অনিবার্য, তাও জানালেন। যদিও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কির স্টার্মার বিক্ষোভকারীদের তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন। জানিয়েছেন, দক্ষিণপন্থী কট্টরপন্থীদের সামনে কখনও মাথা নোয়াবে না ব্রিটেন। দেশের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। (London Anti Migrant Protests)

Continues below advertisement

দক্ষিণপন্থী নেতা, মুসলিম বিরোধী হিসেবে পরিচিত যিনি, সেই স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন ওরফে টমি রবিনসনের নেতৃত্বে ব্রিটেনে অভিবাসন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। ‘Unite the Kingdom’ নামে বিরাট মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে প্রায় ১.৫ লক্ষ মানুষ শামিল হয়েছিলেন। বিদেশি-প্রবেশের বিরুদ্ধে সমস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশে লক্ষ্য করে কাচের বোতল, ভারী বস্তু ছোড়া হয়। দলবেঁধে পুলিশকে লাথি, ঘুষিও মারতে দেখা যায় অনেককে। হামলার মুখে পড়ে ২৬ জন পুলিশ আধিকারিক জখম হয়েছেন সেখানে, যার মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। (London Anti Immigrant Rally)

বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে টমিকে বলতে শোনা যায়, “এদেশের আদালতে এখন ব্রিটিশ নাগরিক, দেশের প্রতিষ্ঠাতাদের চেয়ে অভিবাসীদের বেশি অধিকার।” তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলনের বক্তব্য। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্য়মে সভায় বক্তৃতা করেন তিনি। ইলনকে বলতে শোনা যায়, “ব্রিটিশ হওয়ার মধ্যে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য রয়েছে। কিন্তু আমি ব্রিটেনকে ধ্বংস হতে দেখছি। ভাঙন দিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু ব্যাপক ও অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের ফলে এখন দ্রুতগতিতে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। এভাবে চললে, আপনাদের উপর হিংসা নেমে আসবে। আর কোনও উপায় থাকবে না। পরিস্থিতি গুরুতর হতে চলেছে। আপনারা চান বা না চান, হিংসা নেমে আসবেই। হয় প্রত্যাঘ্যাত করতে হবে, নইলে মরতে হবে। আমার মনে হয়, এটাই সত্য।”

অভিবাসন বিরোধী এই আন্দোলন এবং ইলনের ভাষণের তীব্র নিন্দা করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার। তিনি বলেন, “শান্তিপর্ণ মিছিলের অধিকার রয়েছে নাগরিকদের। এটাই আমাদের দেশের মূল্যবোধ। কিন্তু পুলিশের উপর হামলা, গায়ের রংয়ের জন্য সাধারণ মানুষের উপর হামলা মেনে নেব না। সহিষ্ণুতা, বৈচিত্র এবং সম্মানের উপর দাঁড়িয়ে ব্রিটেন। আমাদের পতাকায় বৈচিত্র রয়েছে। হিংসা, ভীতিপ্রদর্শন এবং মেরুকরণের সামনে কখনও মাথা নোয়াব না।”

ব্রিটেনের বাণিজ্যসচিব পিটার কাইল ইলনের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে যে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। উনি (ইলন) নির্বোধের মতো কথা বলেছেন, যা একেবারেই অশোভনীয়।”

তবে ব্রিটেনই নয় শুধু, চলতি বছরে অভিবাসন বিরোধী মিছিলে তেতে উঠেছে একাধিক দেশ। আমেরিকায় অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতেও অভিবাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। এমনকি ভারতীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। এবার ব্রিটেনের নামও জুড়ল সেই তালিকায়।