নয়াদিল্লি: জিনিসপত্র বইতে কাজে লাগলেও, গত কয়েক দশকে মহার্ঘ ব্যাগের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আভিজাত্যের প্রশ্নও। তাই একটিমাত্র ব্যাগের পিছনে কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ টাকা খরচেই পিছপা হন না অনেকে। পকেটের রেস্ত রয়েছে যাঁদের, তাঁরা তো বটেই, মহার্ঘ ব্যাগের লোভ সামলাতে পারেন না সাধারণ মধ্যবিত্তও। এই মহার্ঘ ব্যাগে তৈরি করে যে সমস্ত সংস্থা, তাদের মধ্যে অবশ্যই অগ্রগন্য ইতালির সংস্থা Dior. বিশ্বায়নের যুগে লাক্সারি ফ্যাশনের সমার্থক হয়ে উঠেছে তারা। কিন্তু কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রি হলেও, মহার্ঘ ওই ব্যাগ তৈরিতে তারা নামমাত্র টাকাই খরচ করে বলে এবার জানা গেল। (Luxury Fashion)
লাক্সারি ফ্যাশনের নামে আসলে সাধারণ মানুষকে লুঠের ব্যবসায় Armani, Louis Vuitton-এর মতো সংস্থাগুলির লিপ্ত বলে অভিযোগ বহুদিনের। সেই নিয়ে মামলাও হয়েছে আদালতে, যাতে থার্ড পার্টি সরবরাহকারীদের থেকে কম দামে ব্যাগ তৈরি করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সেই নিয়ে তদন্তে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদপত্র Wall Street Journal-এ ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বাজারে যে ব্যাগ কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রি করে Dior, তা তৈরি করতে মাত্র ৫৩ ইউরো খরচ হয় তাদের, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪ হাজার ৭৭৮ টাকা। (Luxury Fashion Report)
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৫৩ ইউরো খরচ পড়ে ব্যাগ তৈরি করতে। সেই ব্যাগই পরে বাজারে বিক্রি করা হয় ২৬০০ ইউরোতে, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। একই ভাবে সরবরাহকারীদের থেকে মাত্র ৯৩ ইউরোতে ব্যাগ কেনে Armani,যা ৮ হাজার ৩৮৫ টাকা ভারতীয় মুদ্রায়। পরে সংস্থার হাতে ওই ব্যাগ পৌঁছয় ২৫০ ইউরোতে, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ২২ হাজার ৫৪০ টাকায়। বাজারে ওই ব্যাগ বিক্রি হয় ১ লক্ষ ৬২ হাজারে।
লাক্সারি ফ্যাশন সংস্থার দাবি, উন্নত মানের চামড়া, বনকশা, বিজ্ঞাপন, বিতরণ এবং অন্যান্য খরচ ধরতে গিয়েই দাম বেড়ে যায়। পাশাপাশি, ব্র্যান্ড ভ্যালু অর্থাৎ সংস্থার ঐতিহ্য এবং নামের কদরকেও ঢাল করেছে তারা। যদিও ইতালির সরকারি আইনজীবীরা তাদের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি, লাক্সারি ফ্যাশনের নামে আসলে লোক ঠকানোর ব্যবসা করছে ওই সব সংস্থা। তাই রিপোর্টটি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। যদিও এই রিপোর্ট আইনি প্রক্রিয়ার উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।
ইতালিকে লাক্সারি ফ্যাশনের আঁতুড় বলা হয়। পৃথিবীতে যত লাক্সারি পণ্য রয়েছে, তার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশের আমদানিই ঘটে ইতালি থেকে। ইতালির বহু ছোট ব্যবসায়ীরাই সেগুলির উৎপাদন করে, যা হাতবদল হয়ে বড় বড় সংস্থার হাতে ওঠে। বিত্তশালী, তারকাদের হাতেই সেই সব পণ্যের ব্যবহার চোখে পড়ে, যা দেখে আকৃষ্ট হন সাধারণ মানুষজনও। তারকাদের সবাই গাঁটের কড়ি খরচ করে ওই সমস্ত মহার্ঘ সামগ্রী কেনেন না যদিও। উপহারবাবদ এবং ওই সব সংস্থার বিজ্ঞাপনী মুখ হওয়ার দৌলতে বিনামূল্যেও মহার্ঘ পণ্য হাতে পান তাঁরা।