নয়াদিল্লি: কার আগমন আগে, মুরগি না ডিম, সেই নিয়ে কম বিতর্ক নেই। ভারতেও রসুনকে নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন। রসুন আসলে সবজি না মশলা, সেই নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এবার বিতর্কে ইতি টানল মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। আদালতের ঘোষণা, রসুন আসলে সবজিই। সবজি বাজার এবং মশলার দোকান, সর্বত্রই এর বিক্রি চলতে পারে বলে মত আদালতের। আদালতের এই মন্তব্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিতর্কের অবসান ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে। (Garlic Classification Debate)
মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ইন্দৌর বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। এতে শুধু বিতর্কের অবসানই ঘটল না, কৃষকরাও স্বস্তি পেলেন বলে মত অধিকাংশের। কারণ মশলা হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হলেও, সবজি বাজারে রসুন বিক্রিতে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আর বাধার মুখে পড়তে হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তাই আদালতের রায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সকলে। (Garlic Classification Debate)
রসুনের তীব্র গন্ধ রয়েছে। রান্নার স্বাদবৃদ্ধি থেকে সর্দি-কাশি নিরাময়, একাধিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার চোখে পড়ে। কিন্তু এই রসুনকে ঘিরে বিতর্কও রয়েছে বিস্তর। রসুন সবজি না মশলা, সেই বিতর্ক আদালতে পৌঁছয় প্রায় এক দশক আগে। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশের কৃষক সংগঠন রসুনকে সবজি হিসেবে গন্য করার দাবি জানায়। সেই মতো মান্ডি বোর্ডের কাছে আবেদন জানায় ওই সংগঠন, যাতে সম্মতিও মেলে।
কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কৃষি বিভাগ তড়িঘড়ি ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়। ১৯৭২ সালের কৃষি পণ্য বাজার কমিটি আইনের আওতায় পুনরায় রসুনকে মশলা হিসেবে গন্য করা হয়। এর পাল্টা, ২০১৬ সালে আলু, পেঁয়াজ এবং রসুন কমিশন এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টের ইন্দৌর বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। রসুনকে মশলার গোত্রে ফেলার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানায় তারা। ২০১৭ সালে আলু, পেঁয়াজ এবং রসুন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষেই রায় দেয় আদালত।
এর পরও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে মুকেশ সোমানি নামের এক ব্যক্তি আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দেন। সেই থেকে আদালতে বিষয়টি ঝুলে ছিল। শেষ পর্যন্ত ইন্দৌর বেঞ্চের দুই বিচারপতি এসএ ধর্মাধিকারী এবং বিচারপতি বেঙ্কটরমণ রসুনকে সবজি হিসেবে গন্য করলেন। সবজি এবং মশলার বাজার, উভয় জায়গাতেই রসুন বিক্রি করা যাবে বলে জানাল আদালত।
রসুন নিয়ে এই টানাপোড়েনের নেপথ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক স্বার্থ। রসুন সবজি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার ফলে সরাসরি মান্ডিতে রসুন বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। আলাদা করে এজেন্টদের কমিশন দিতে হবে না তাঁদের। সবজি এবং মশলা, দুই বাজারেই রসুন বিক্রি করা যাবে। আগে মান্ডিতে কৃষকের থেকে রসুন কেনার বিষয়টি ছিল ঐচ্ছিক। আদালত জানিয়েছে, রসুনকে মশলার শ্রেণিভুক্ত করা হলেও, এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশের উপর হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার নেই সরকারের। আর সিদ্ধান্ত বদল করা যাবে না।