মুম্বই: টান পড়েছে রাজ্যের কোষাগারে। কৃষকদের ঋণ পর্যন্ত মকুব হচ্ছে না। কিন্তু তার মধ্যেও মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র জোট সরকার টাকা অপচয় করছে বলে এবার অভিযোগ তুলল প্রদেশ কংগ্রেস। তাদের দাবি, সংসদীয় কমিটির জন্য মহাভোজের আয়োজন করতে গিয়ে জলের মতো টাকা খরচ করেছে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের সরকার। (Maharashtra News)
মহারাষ্ট্রের বিধান ভবন কমপ্লেক্সে সম্প্রতি সংসদের এস্টিমেট কমিটির বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন হয়। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা দু’দিন ব্যাপী ওই সম্মেলনের সূচনা করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬০০ অতিথি যোগ দেন ওই সম্মেলনে। আর সেই উপলক্ষে রাজ্যের সরকার যে এলাহি আয়োজন করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। (Devendra Fadnavis)
কংগ্রেসের দাবি, ৬০০-র বেশি অতিথি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের জন্য় এলাহি আয়োজন করা হয়েছিল। খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও ছিল চোখে পড়ার মতো। মাথাপিছু ৫০০০ টাকা প্লেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। খাবার পরিবেশন করা হয় রুপোর থালাবাটিতে। প্রত্যেককে রুপোর থালায় খেতে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। সেই মতো ৫৫০ টাকা দরে এক একটি রুপোর প্লেট ভাড়া করা হয়।
মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ারের দাবি, ফড়ণবীস সরকার বেহিসেবি খরচ করেছে। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য যখন দেউলিয়া হওয়ার পথে, সেই সময় রুপোর থালায় খাবার পরিবেশন করার প্রয়োজন কী ছিল?” মাথা পিছু ৫০০০ টাকা প্লেট খাবার বরাদ্দ করতে পারছে রাজ্য সরকার, অথচ কৃষকদের কয়েক হাজার টাকার ঋণ মাফ করতে পারছে না কেন, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে বরাদ্দ কেন ছাঁটা হচ্ছে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
সংসদের এস্টিমেট কমিটি সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের খরচ-খরচার হিসেব রাখে। রাজ্যের প্রশাসনিক বিভাগগুলি চালাতে কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে, বাজেটে কোথায় কত বরাদ্দ হচ্ছে, সব নজরে থাকে তাদের। সেই কমিটির মন জয়ে রাজ্য সরকার বেহিসেবি টাকা খরচ করেছে বলে দাবি মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হর্ষবর্ধন সপকলেরও। তাঁর বক্তব্য, “৫৫০ টাকা ভাড়ার রুপোর থালায় ৫০০০ টাকার খাবার বরাদ্দ প্রত্যেকের জন্য। ধুলেতে সরকারি গেস্ট হাউসে যে টাকা উদ্ধার হয়, সেই টাকাই কি খরচ করা হল আয়োজনে?”
সমাজকর্মী বিজয় কুম্ভরও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। জানিয়েছেন, ৬০০ অতিথির জব্য ২৭ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। মানুষের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। বিধানভবনে অতিথিদের জায়গা দিতেই মাথাপিছু ৪৫০০ টাকা খরচ হয়। রুপোর থালা ভাড়া করে আনা হয় ৫৫০ টাকা দরে। খরচ-খরচার হিসেব রাখার কথা যে কমিটির, তাদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করা হল। কুম্ভর বলেন, “নিজেদের দায়িত্ব ভুলে হাসির পাত্র হয়ে উঠেছেন কমিটির সদস্যরা। ৪০ ফুটের ব্যানার, তাজ প্যালেস, ট্রাইডেন্টে থাকার ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে নৈশভোজ, ঝাড়বাতি, লাল গালিচা, করদাতাদের টাকা নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছে।”
শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, “মহারাষ্ট্রে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে, তার সঙ্গে পৃথিবীর কোনও দুর্নীতির তুলনা চলে না।” এ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত।