দীপক ঘোষ, কলকাতা: দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আস্তে আস্তে যেভাবে এ রাজ্যে নিজেদের পায়ের তলায় মাটি শক্ত করেছে বিজেপি, সেই মাটি দুর্বল হচ্ছে না তো? এই প্রশ্ন এখন কুরে কুরে খাচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। কারণ করোনার ধাক্কায় তালা পড়েছে রাজনীতির কারবারে। দার্জিলিং থেকে দরিয়াগঞ্জ এখন রাজনীতিমুক্ত। শারীরিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে, বেড়েছে মানসিক নৈকট্য। এক সুর, এক মনে এখন শুধু করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। এই পরিস্থিতি কত দিন চলবে, কেউ জানে না। একদিন তো থামবে, কিন্তু তত দিনে তেল-জল খাওয়া মেশিনের মতো ছুটতে থাকা  রাজনীতির রথে যেন মোর্চা না পরে যায়। কারণ সবাই এখন ঘরবন্দি।


করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে একদিন দুম করেই পুর ভোটের ঘন্টা বাজিয়ে দেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ভোটের জন্য প্রস্তুতির কাজে মাত্র হাত দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। ওমনি হঠাৎই ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে সব গৃহবন্দি। এই পরিস্থিতিতে কী করা যায়, এই নির্বাসন পর্বকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে একটা উপায় বের করেছে বিজেপি। জেলায় জেলায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এখনই পুরভোটের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে ফেলার জন্য। রাজ্যের সব পার্টি অফিসে প্রার্থী হবার আবেদন পত্র জমা নেবার জন্য যে ড্রপ বক্স রাখা হয়েছিল, সেই সব আবেদন গুলিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। তারপর জেলা দফতর গুলি নিজেদের জোনাল কমিটির কাছে সেই তালিকা পাঠাবে চূড়ান্ত অনুমোদনের কাছে।


করোনার ধাক্কায় দল  কর্মসূচিহীন। লোকজন নিয়ে মানুষের বিপদে  হইহই করে নেমে যাওয়াও যাচ্ছে না। নিজেদের হাতে প্রশাসন নেই। মমতা ব্যানার্জির নির্দেশ পেয়ে তৃণমূলের ২২ জন সাংসদ পৌঁছে গেছেন নিজেদের নির্বাচনী এলাকায়। বিজেপির ১৮ জন সংসদ আছেন বটে, কিন্তু বঙ্গীয় রাজনীতির নিয়মে তারা নাকি আমলা স্তরে কলকে পান না। এই প্রসঙ্গে বিজেপির নেতা সায়ন্তন বসু বলেন," দিলীপ ঘোষের ফোনই তুলতে চান না ডিএম-এসপি, বাকিদের অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই তথৈবচ । সুতরাং সাংসদ হলেও , ওনাদের কিছুই করণীয় নেই প্রশাসনিক স্তরে।"


তাহলে কি কৌশল দলের? মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে, দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সামনে থেকে করোনা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর করোনা এখন গেরুয়া নেতাদের ঠেলে দিয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বিজেপি ঠিক করেছে, প্রচারকে হাতিয়ার করেই টিকে থাকতে হবে এই স্রোতের বিরুদ্ধে। দলের সাংসদরা তাদের সাংসদ তহবিল থেকে বরাদ্দ করে দিচ্ছেন করোনা মোকাবিলায়, সেটাকেই বিরাট করে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। যদিও কটাক্ষও উড়ে আসছে যথারীতি। বামেরা বলছে, মোটা টাকা তো বেতন পান ওনারা, এক টাকাও তো  দিলেন না। এমপি ল্যাডের এক টাকাও ওনাদের কারও নয়। ওটা পাবলিকের টাকা। ওনাকে শুধু ক্ষমতা দেওয়া আছে সংসদ তহবিলের টাকা জনগণের জন্য খরচ হবে, কিন্তু কোন খাতে খরচ হবে সেই সিদ্ধান্ত জানানোর। কেন্দ্রীয় সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটাকেই হাতিয়ার করে সামাজিক মাধ্যমে হৈচৈ ফেলে দিতে চাইছে গেরুয়া শিবির। প্রচার-প্রোপাগান্ডায় তাদের আইটি সেল-এর "দক্ষতা" প্রশ্নাতীত। সূত্রের খবর, তাদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই সঙ্কটে যে "নজিরবিহীন" পদক্ষেপ নিয়েছে, তার জয়জয়কার ধ্বনি গুঞ্জরিত হোক সামাজিক মাধ্যমে। বর্তমান সঙ্কটে এটাই হতে পারে ভবিষ্যতের ডিভিডেন্ড।


এদিকে কংগ্রেস দলটা এখন কার্যত গৃহবন্দি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দলের প্রদেশ সভাপতি সৌমেন মিত্র গৃহবন্দি। একমাত্র দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে অধীর চৌধুরিকে। তবে ভিন্ন ছবি বামেদের। তারা এই দুর্যোগে জনসংযোগ বজায় রেখেছে। কোথাও সচেতনতা অভিযান, কোথাও মাস্ক, কোথাও স্যানিটাইজার আর এখন বাম কর্মীদের এখন খাবার বিলি করতেও দেখা যাচ্ছে।


সব মিলিয়ে বঙ্গীয় রাজনীতিতে অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল।