ইম্ফল: সাম্প্রদায়িক অশান্তির মেঘ কাটেনি এখনও পর্যন্ত। আর তার মধ্যেই প্রকৃতির রোষ আছড়ে পড়ল মণিপুরে। ভারী বৃষ্টিতে বানভাসি গোটা রাজ্য। হড়পা বান, ভূমিধসে বিপর্যস্ত রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। উদ্ধারকার্য চালাতে সেখানে সেনা নামানো হয়েছে। অসম রাইফেলসের জওয়ানরা এখনও পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকা থেকে ৮০০ জনকে উদ্ধার করেছেন। অসম, অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের অবস্থাই এই মুহূর্তে তথৈবচ। একটানা ভারী বৃষ্টি, হড়পা বান ও ধসের জেরে গত দু'দিনে সেখানে কমপক্ষে ৩০ জন মারা গিয়েছেন। অসমের ১২টি জেলা মিলিয়ে ঘরছাড়া ৬০ হাজার মানুষ। (Manipur Floods)
মণিপুরে বন্যা সামাল দিতে সেনা এবং অসম রাইফেলসের তরফে ‘Operation JalRahat 2’-র সূচনা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা থেকে সকলকে উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য়। শনিবার যে ৮০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে প্রবীণ এবং ভিন্ন ভাবে সক্ষম লোকজনও রয়েছেন। সেনা ও অসম রাইফেলসের সঙ্গে কুইক রেসপন্স টিমও মোতায়েন রয়েছে জায়গায় জায়গায়। (North East Floods)
এখনও পর্যন্ত যা খবর, ওয়াংখেই, সাঞ্জেনতং, প্যালেস কম্পাউন্ড, নিউ চেকন, শৈবম লেইকাই, নোংমেইবুং রাজ বাড়ির মতো এলাকায় বন্যার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ইম্ফল ইস্ট এবং ওয়েস্টের জেলাগুলিও বানভাসি প্রায়। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরেই এই অবস্থা মণিপুরের। একনাগাড়ে বৃষ্টির জেরে হড়পা বান আছড়ে পড়েছে যেমন, তেমনই ধসও নেমেছে জায়গায় জায়গায়।
সেনার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মণিপুরের বেশ কিছু এলাকা প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত। উদ্ধারকার্যের জন্য পৃথক দু’টি দল গড়া হয়েছে। শনিবার একটি দল উদ্ধারকার্য চালিয়ে ১৯৩ জনকে উদ্ধার করে, যার মধ্যে ৮৫ জন মহিলা ও ৪৪ শিশু। দ্বিতীয় দলটি ১৮২ জনকে উদ্ধার করে আনে, যার মধ্যে ৯০ জন মহিলা ছিলেন, শিশু ছিল ৫৭। ইম্ফল ইস্ট এবং ওয়েস্টের জেলাগুলি থেকে আরও ৪০৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। সকলকে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে পানীয় জল, খাবারের প্যাকেট এবং ওষুধপত্র।
অসমের খুরাই থেকে এর মধ্যে উদ্বেগজনক খবর সামনে আসে। বেশ কিছু শিশু নিখোঁজ বলে জানা যায়। খবর পেয়েই শুরু হয় উদ্ধারকার্য। শেষ পর্যন্ত শনিবার বিকেলে নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধার করা যায়। শনিবার ভোরবেলা অসম রাইফেলসের সহযোগিতায় অল ইন্ডিয়া রেডিও-র অফিস খালি করাও সম্ভব হয়। ওই অফিসে পর্যন্ত জল ঢুকেছে বলে জানা গিয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, সেই সঙ্গে পশ্চিমিঝঞ্ঝা, এই দুইয়ের জেরে মণিপুরের পাশাপাশি, উত্তর-পূর্বের অন্য় রাজ্যগুলিতেও প্রভাব পড়েছে। ভারী বৃষ্টি, ধসের জেরে অবরুদ্ধ রাস্তাঘাট। বেশ কিছু জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। শনিবার মিজোরামে চার জন মারা গিয়েছেন বলে খবর। ধসে চাপা পড়ে তাঁরা মারা গিয়েছেন। অরুণাচল প্রদেশ থেকেও ন'জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অসমে ধসে চাপা পড়ে পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সিকিমে লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। তিস্তার জলস্তর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে একধাক্কায়। একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে বলেও খবর।