ইম্ফল: মণিপুরে শান্তি ফিরছে বলে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটি থেকে হিংসার খবরে উঠে আসছে লাগাতার (Manipur Horror)। এবার সাত বছরের এক বালককে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘিরে আবারও তোলপাড় পরিস্থিতি। ওই বালকের মা-বাবা কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের। তার জন্যই তাকে পুড়িয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। (Manipur Violence)


মণিপুর পুলিশের তরফে এমন নৃশংসতার ২০টি মামলার তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই বাসককে পুড়িয়ে মারার তদন্তভারও হাতে পেয়েছে CBI. সবমিলিয়ে মণিপুর হিংসায় এখনও পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি মানুষের হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। ঘরছাড়া ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। সেই আবহেও হিংসা অব্যাহত। 


সাত বছরের ওই বালককে তোনসিং হাংসিং বলে শনাক্ত করা গিয়েছে। গত ৪ জুন তাকে পুড়িয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। ছেলেটির বাবা কুকি সম্প্রদায়ের, মা মেইতেই সম্প্রদায়ের। প্রথমে গুলিবিদ্ধ হয় ওই বালক। সেই অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। 


আরও পড়ুন: Congress Reshuffle: CWC-তে শশী-সচিন-প্রিয়ঙ্কা, বাংলা থেকে শুধু দীপা, পেলেন কংগ্রেসে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা


মণিপুরের ইম্ফলের ইরোইসেম্বা গ্রামের ঘটনা। ছেলেটির বাবা, জশুয়া হাংসিং বিষয়টি সামনে আনেন। জানান, হিংসার আঁচ এসে পড়ে তাঁদের গ্রামেও। গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগ চলছিল, তার মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় ছোট্ট তোনসিং। মাথায় গুলি লাগে তার, কিন্তু শরীরে প্রাণ ছিল। অসম রাইফেলের একটি অ্যাম্বুল্য়ান্স ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় ভিড় এসে হামলা করে। আগুন ধরিয়ে দেয় অ্য়াম্বুল্যান্সে। তাতেই জীবন্ত পুড়ে মৃত্যু হয় ওই বালকের।


সংবাদমাধ্যমে ছেলেটির বাবা জশুয়া সেই সময় জানান, অশান্তির জেরে অসম রাইফেলসের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। ছোট ছেলে সেখানেই ছিল। আচমকাই ৪ জুন গোলাগুলি শুরু হয় ওই সেনা শিবিরে। তাতে মাথায় গুলি লাগে বালকটির। তড়িঘড়ি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু হাসপাতালে যেতে বাধা দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সটিকে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই পুড়ে মৃত্যু হয় ওই বালকের। ওই বালকের মাকেও হত্যা করা হয়। 


জশুয়া জানিয়েছেন, ৪ জুন সন্ধেয় এই ঘটনা ঘটে। ছেলে এবং স্ত্রীর মৃত্যুর কথা তিনি জানতে পারেন ৬ জুন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে বিষয়টি জানান। কিন্তু স্ত্রী এবং ছোট ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েও তিনি কাঁদতে পারেননি বলে জানান জশুয়া। আরও দুই সন্তান রয়েছে তাঁর। তারা যাতে বিষয়টি জানতে না পারে, তার জন্যই যন্ত্রণা মনে চেপে রেখেছিলেন বলে জানান। কয়েক দিন পর বিষয়টি জানতে পেরে ওই দুই সন্তান কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান বলে জানান জশুয়া।


ওই দিন ছোট্ট তোনসিং, তার মা মীনা হাংসিং (৪৫)-সহ তাঁদের আত্মীয় লিডিয়া লুরেমবামকেও হত্যা করা হয় বলে জানা গিয়েছে। মেইতেই খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে মীনা বিয়ে করেছিলেন কুকি সম্প্রদায়ের জশুয়াকে। নিহত লিডিয়াও মেইতেই খ্রিস্টান ছিলেন।