নয়াদিল্লি: নয় নয় করে কেটে গিয়েছে দু'মাসের বেশি সময়। এখনও শান্তি ফেরার ইঙ্গিত নেই মণিপুরে। তার মধ্যেই সেখানে হতাহতের পরিসংখ্যান সামনে এল। অশান্তি, হিংসায় গত দু'মাসে মণিপুরে ১৪২ জন মারা গিয়েছেন বলে জানাল রাজ্যের সরকারই (Manipur News)। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) হতাহতের সংখ্য নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা। তাতে ইম্ফল ওয়েস্ট-ইস্ট, চূড়াচন্দ্রপুর জেলাতেই এর মধ্যে অধিকাংশ মৃত্যু ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে (Manipur Violence)। যদিও সরকারি হিসেবের চেয়ে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি স্থানীয়দের।


মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গত ৩ জুলাই রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। সোমবার সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যসচিব বিনীত জোশী। তাতে ৩ মে থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ১৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কোন জেলায় কতজন মারা গিয়েছেন, পৃক ভাবে তার বিশদ তথ্যেরও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। 


মণিপুর সরকারের তরফে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ইম্ফল ওয়েস্ট এবং ইস্টে ২৯ জন করে মোট ৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মে মাসের গোড়ায় অশান্তি মাথাচাড়া দিলে, ইম্ফলেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে।  সবার আগে সেখানেই হিংসা দেখা দেয়। তার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। হিংসা তীব্র আকার ধারণ করে চূড়াচন্দ্রপুরে। সেখানে মারা গিয়েছেন ২৬ জন। 


আরও পড়ুন: Heavy Rain: মরা যমুনাও ফুঁসছে ক্রোধে, ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তর ভারত, তিনদিনে কমপক্ষে ৩৭ জনের মৃত্যু


মণিপুর সরকার জানিয়েছে, উপত্যকা অঞ্চলের কাকচিং এবং বিষ্ণুপুর জেলায় যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পার্বত্য় জেলা কাংপোকপিতে মারা গিয়েছেন আট জন।  এ ছাড়াও তেংনুপোলে প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। থুবালে চার জন, কামজংয়ে দু'জন এবং চান্দেলে মারা গিয়েছেন এক জন নাগরিক। 


গত ৩ জুলাই থেকে এ যাবৎ মণিপুরে ৫,০৫৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে বলে দাবি মণিপুর সরকারের। তারা জানিয়েছে, এর মধ্যে কাংপোকপিতেই ১,০৯১টি এগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। চূড়াচন্দ্রপুরে এই সংখ্যা ১,০৪৩। ৯৩৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে ইম্ফল ইস্ট থেকে এবং ৫২৮টি বিষ্ণুপুর থেকে। 


বাড়িঘর ছেড়ে এই মুহূর্তে মণিপুরের বিভিন্ন জায়গায়, ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মণিপুর সরকার আদালতে জানিয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে ঘরছাড়া ৫৪ হাজার ৪৮৮ জন নাগরিক। চূড়াচন্দ্রপুরের ১৪ হাজার ৮১৬ জন বাসিন্দা ঘর ছেড়েছেন। ১০২টি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে তাঁদের। কাংপোকপির ১২ হাজার ৭৪০ জন গৃহহীন নাগরিক ঠাঁই নিয়েছেন ৬০টি ত্রাণশিবিরে। 


রাজ্য সরকার প্রদত্ত পরিসংখ্য়ান অনুযায়ী, মণিপুরে অশান্তি এবং হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫,৯৯৫টি FIR দায়ের হয়েছে। ৪ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১৮১ জন। এর মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ১৯৮ জন। ব্যক্তিগত বন্ডে মুক্তি পেয়েছেন দু'জন নাগরিক। রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জবাবে মণিপুর সরকার জানিয়েছে, পাহাড় এবং উপত্যকা এলাকায় গোপন আস্তানা গড়া হয়েছে কিছু, যা এই মুহূর্তে উদ্বেগের বড় কারণ। নিরাপত্তবহিনী সেগুলিকে ভেঙে ফেলার কাজে নেমে পড়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে কৃষিকাজে ফিরতে পারেন, তার জন্য নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। ইম্ফল এবং জিরিবামে নিত্য প্রয়োজনের জিনিস সরবরাহ করছে রাজ্য সরকার।


তবে সরকারের তরফে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে দাবি করা হলেও, সোমবারও উত্তপ্ত থেকেছে মণিপুর। সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে এক পুলিশকর্মীর। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। কাংচুপের ফাইয়েং এবং সিংড়া গ্রামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও সামনে এসেছে।