নয়াদিল্লি: একটানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক শহর। রাস্তাঘাট সব বন্ধ। জলের তলায় চলে গিয়েছে জাতীয় সড়ক-সহ একাধিক রাস্তা (North India Rain)। ধস নেমেছে জায়গায় জায়গায়। ঘরবাড়ি, গাড়ি-ঘোড়াকে খেলনার মতো ভাসতে দেখা গিয়েছে একাধিক জায়গায়।  সবমিলিয়ে গত তিনদিনে ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।  পরিস্থিতি এমন যে, দিল্লিতে যমুনা নদীর জলস্তরও বিপদসীমা পার করে গিয়েছে।  সোমবার বিকেলে যমুনার জলস্তর ছিল ২০৫.৩৩ মিটারে, মঙ্গলবার সকালে তা ২০৬.২৪-তে পৌঁছে গিয়েছে। হরিয়ানা থেকে জল ছাড়ার ফলেই এমন পরিস্থিতি বলে মনে করা হচ্ছে (Heavy Rain)।


ভারী বর্ষণে দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর-সহ একাধিক রাজ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা হিমাচলপ্রদেশের। সেখানে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বিপাশা নদী। তার গ্রাসে ইতিমধ্যেই জলে গিয়েছে ঘরবাড়ি, জাতীয়সড়ক। প্রবল রোষে ফুঁসতে থাকা বিপাশার জলে কাগজের নৌকার মতো ভাসতে দেখা গিয়েছে একাধিক গাড়িকে। বসতি এলাকাতেও জল ঢুকে গিয়েছে। মন্দির-সহ উঁচু অট্টালিকাগুলির কিছু অংশও জলের নীচে চলে গিয়েছে। 



এর পাশাপাশি হিমাচলে বেড়ে চলেছে হড়পা বানের প্রকোপ। লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় ধসে গিয়েছে বাড়ি। মানালি, কুলু, কিন্নৌর, চাম্বায় দোকানঘর, যানবাহন সব ভেসে গিয়েছে। ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রু, চন্দ্রভাগা, সব নদীর জলস্তরই পার করে গিয়েছে বিপদসীমা। আগামী ২৪ ঘণ্টা সমস্ত নাগরিককে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু। রাজ্য সরকারের তরফে আপদকালীন হেল্পলাইন নম্বর ১১০০, ১০৭০ এবং ১০৭৭ চালু করা হয়েছে। 


হড়পা বান এবং ধসে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডও। সেখাবকার প্রায় সব নদীর জলস্তরই বিপদসীমা পার করে গিয়েছে। গুরুগ্রাম এবং দিল্লিতে রাস্তাঘাট সব জলমগ্ন হয়ে থাকায় গুরুগ্রাম এবং দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকছে মঙ্গলবারও। গুরুগ্রামে বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ অর্থাৎ 'ওয়র্ক ফ্রম হোম' করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে রাস্তায় যানজট না হয়, এড়ানো যায় বিপদ।


আরও পড়ুন: Amarnath Yatra: বৃষ্টি-ধসে আটকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী, আচমকাই স্থগিত অমরনাথ যাত্রা


দিল্লি সরকারের তরফে রাজধানীতে ১৬টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পড়শি রাজ্য হরিয়ানা আরও উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ হরিয়ানার হাতিকুণ্ড বাঁধ থেকে যমুনার ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। তা নিয়ে সোমবারই জরুরি বৈঠক করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। প্রয়োজন পড়লে নীচু এলাকাগুলি থেকে মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।


লাগাতার ভারী বর্ষণে জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া, সাম্বা জেলায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। পর পর তিন দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার অমরনাথযাত্রা শুরু হয়েছিল বটে, তবে ফের স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে যাত্রা। রাজস্থান, পঞ্জাব এবং হরিয়ানার একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে এখনও। সেখানে উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে।


মৌসম ভবন জানিয়েছে, পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রকোপ এবং বর্ষার ঝোড়ো হাওয়া, দুইয়ের প্রকোপেই উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভারী বৃষ্টি হয়ে চলেছে একনাগাড়ে। তবে এখনই সেই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার নেই বলেও জানানো হয়েছে। আগামী কয়েক দিন হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, দিল্লিতে ভারী বৃষ্টি চলবে বলে জানিয়েছে তারা।