নয়াদিল্লি: রুক্ষশুষ্ক মরুভূমিতে সিক্ত করে তুলতে কাজে লাগানো হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে। কিন্তু তা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হচ্ছে বারং বার।  ভারী বৃষ্টির জেরে আবারও বানভাসি পরিস্থিতি মরুরাষ্ট্র সৌদি আরবে।  রাস্তাঘাট সব জলের নীচে চলে গেল। জলমগ্ন হয়ে গেল পবিত্র মক্কা এবং মদিনাতেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছেন সকলেই। (Mecca-Medina Flood)


ঘন ঘন বজ্রপাত, ভারী বৃষ্টিতে সৌদি আরবের রাজধানী জেড্ডার অবস্থা এই মুহূর্তে বিপজ্জনক।  জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। রাস্তাঘাটে, যেখানে সেখানে আটকে রয়েছে গাড়ি। রাস্তার মাঝে পেল্লাই আকারের বাসও আটকে থাকতে দেখা গিয়েছে। মক্কা এবং সংলগ্ন এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মানবশৃঙ্খল গড়ে সেখানে আটকে পড়া মানুষজনকে জল থেকে উদ্ধার করতেও দেখা গিয়েছে। (Jeddah Heavy Rainfall)




মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে আল-আওয়ালি এলাকায় বুকসমান জলে আটকে পড়ে ছোটরা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যান। মোটরসাইকেল সমেত জলে পড়ে যান এক ডেলিভারি পার্টনার। জলের তোড় তাঁকে প্রায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাঁকেও উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। তবে বৃষ্টি থামার নাম নেই। এখনও অবিরাম বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে গাছপালাও। ধ্বংসস্তূপ জমা হয়ে রয়েছে জায়গায় জায়গায়। কিং আব্দুলাজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে রয়েছে একাধিক বিমান। সেখানে ঝোড়ো হাওয়ায় জিনিসপত্র উড়ে যেতেও দেখা গিয়েছে। শিলাবৃষ্টির খবরও সামনে এসেছে একাধিক জায়গা থেকে।




মদিনার আল-শফিয়া প্রশাসন জানিয়েছে, রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে তাদের এলাকায়, ৪৯.২ মিলিমিটার। জেড্ডার আল-বসাতিনে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মদিনার সেন্ট্রাল হালামে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬.১ মিলিমিটার, আল-মসজিদে ৩৩.৬ মিটার. কুমা মসজিদে ২৮.৪ মিলিমিটার, সুলতানায় ২৬.৮ মিটার, আল-সুয়াইদ্রিয়ায় ২৩ মিলিমিটার। মক্কা, মদিনা, কাসিম, তাবুক, আস-জউফের মতো এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও দিয়েছিল। ভারী বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে দৃশ্যমানতাও একধাক্কায় নেমে গিয়েছে। নাগরিকদের উদ্দেশে জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা। 



মরুরাষ্ট্র সৌদিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেখানে বার বার বানভাসি হয়েছে চারিদিক। এর নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি, কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি নামানোকেও দায়ী করা হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে মেঘ বুনে বৃষ্টি নামানো হয় সৌদিতে। মেঘরাশিকে বৃষ্টির উপযোগী করে তুলতে বরফের কণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ভিতরে। এর ফলে বরফের কণার ওজন বেড়ে যায়, তা থেকে ভারী বৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি, বিমানের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মেঘের মধ্যে। এর ফলে বৃষ্টি নামে সেখানে। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঘটাতে গিয়ে সেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে মত বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা।