শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরে ভিনরাজ্যের আরও একজন খুন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত লোকটি পেশায় দিনমজুর, ছত্তিশগড় থেকে কর্মসূত্রে সেখানে এসেছিলেন। বুধবার পুলওয়ামার কাকপোরা গ্রামে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসবাদীরা। তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। এই নিয়ে সোমবার থেকে বাইরের রাজ্যের দুজনের রক্ত ঝরল কাশ্মীরে। একটি সূত্রের দাবি, নিহত শ্রমিক স্থানীয় ইট ভাঁটায় কাজ করতেন। হত্যাকারীদের খোঁজে পুলিশি তল্লাসি চলছে। গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল, রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কয়েকদিন আগে থেকেই স্থানীয় প্রশাসন, সরকার পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা আশঙ্কা, আতঙ্কে জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপর উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক পোস্টার চোখে পড়ে যাতে স্থানীয় বাসিন্দা নন, এমন শ্রমিকদের অবিলম্বে জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়ার ফতোয়া দেওয়া হয়। রাজ্যে থেকে গেলে ‘ফল ভুগতে হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি ছিল সেই পোস্টারগুলিতে। পুলিশের বক্তব্য, নিহত শ্রমিক সম্ভবত, আর্থিক সঙ্কটের জেরে রাজ্যে থেকেই যান।
মুখ্যসচিব রোহিত কানসাল গত শনিবার রাজ্যে কিছু যোগাযোগ সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থা ফের চালুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর এই নিয়ে দুজন ভিনরাজ্যের লোক জম্মু ও কাশ্মীরে প্রাণ হারালেন। একটানা ৭৩ দিন জম্মু ও কাশ্মীরে বহাল থাকা যোগাযোগ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ধাপে ধাপে শিথিল করার একেবারে শেষ পদক্ষেপ হিসাবে রাজ্যে পোস্টপেড মোবাইল পরিষেবা ফের চালুর ঘোষণা করেন কানসাল। যদিও প্রিপেড মোবাইল, ইন্টারনেট পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।
গত সোমবার সোপিয়ানের সিন্ধু সিরমল গ্রামে এক আপেলবাহী ট্রাকচালক খুন হন, নিগৃহীত হন আপেল বাগিচার মালিক। সম্ভবত, ব্যবসা-বাণিজ্য ফের শুরু করা ও স্বাভাবিক জনজীবনে ফেরা থেকে সাধারণ বাসিন্দাদের বিরত রাখাই এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল। ট্রাকচালক রাজস্থানের লোক ছিলেন। এক পাকিস্তানি নাগরিক সমেত দুজন ট্রাকচালক হত্যায় জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ। তাদের খুঁজে বের করার অভিযান চলছে। পুলিশের বক্তব্য, আপেল বাগিচা থেকে তোলার মরসুম আসছে। উপত্যকা থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল পরিবহণ বাড়ছিল। তা বানচাল করতেই সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছে। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী বারংবার বাকি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন ফের শুরু করা থেকে বিরত থাকতে বলে ফতোয়া জারি করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে যোগাযোগ বিপর্যস্ত হওয়ার পর প্রথম আপেল ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা হয় সেপ্টেম্বরে। দক্ষিণ কাশ্মীরের ডাঙ্গেরপোরায় বড় আপেল ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ রাঠেরের বাসভবনে হামলা চালিয়ে একটি ৫ বছরের বাচ্চা সমেত চারজনকে জখম করে মুখোশপরা বন্দুকধারীরা।