নয়াদিল্লি: সেনানিবাস বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বসতি এলাকার পৃথকীকরণে উদ্যোগী হল কেন্দ্র। ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে থাকা বসতি এলাকাকে আলাদা করে, তা স্থানীয় পুরসভার হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দেওয়া হল। দেশের ৬২টি ক্যান্টনমেন্ট এলাকা স্থানীয় পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, যে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলি রয়েছে, সেগুলি তুলে দিয়ে সেনা স্টেশন রাখা হবে। শুধুমাত্র ওই স্টেশনই সেনার দখলে থাকবে, তার বাইরের এলাকা তুলে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুরসভার হাতে। (Cantonment Boards)


সেনার থাকার কোয়ার্টার এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয় যে এলাকায়, তাকে বলা হয় ক্যান্টনমেন্ট। সেই ইংরেজ আমলেই এই ক্যান্টনমেন্টগুলি গড়ে ওঠে। পলাশির যুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরেই প্রথম ক্য়ান্টনমেন্টের প্রতিষ্ঠা করে তারা। বসতি এলাকা থেকে দূরে, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাব থেকে দূরে ওই ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলা হয়। কালক্রমে ওই ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে সাধারণ মানুষও বসবাস করতে শুরু করেন। দেশে এমন একাধিক ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে, যার উপর প্রতিরক্ষামন্ত্রকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম রয়েছে। (Cantonment Areas)


সেই নিয়েই এবার রদবদল হতে চলেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেই মর্মে। বলা হয়েছে, বসতি এলাকাগুলিকে স্থানীয় পুরসভার হাতে তুলে দিতে হবে। গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরামানের নেতৃত্বাধীন বৈঠকেই এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং পরিষেবার জন্য যে সম্পদ রয়েছে, তা রাজ্য সরকারের স্থানীয়র পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের যদি ঋণও থাকে, তাও স্থানীয় পুরসভার হাতে উঠবে। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে নিজের অধিকার ধরে রাখবে কেন্দ্র। 


আরও পড়ুন: NEET-UG: কাগজ-কলম উঠে গিয়ে কম্পিউটারে পরীক্ষা? NEET-UG নিয়ে ভাবনা কেন্দ্রের,আগামী বছর থেকেই চালু হতে পারে


কেন্দ্র জানিয়েছে, ক্য়ান্টনমেন্টের যে বসতি এলাকা স্থানীয় পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে, সেখান থেকে কর এবং অন্যান্য ফি আদায় করতে পারবে রাজ্য। কিন্তু হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত? দিল্লি সূত্রে খবর, ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতীক হয়ে রয়ে গিয়েছে ক্যান্টনমেন্টগুলি। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাসকারী মানুষ জন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত রয়ে যান।  সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত। 


এর আগে, ১৯৪৮ সালেও ক্যান্টনমেন্টের বসতি এলাকাকে স্থানীয় প্রশাসনের এক্তিয়ারে আনতে উদ্যোগ গৃহীত হয়। কিন্তু মানুষের আপত্তিতে তা করা যায়নি। এর পর থেকে বার বার চেষ্টা হলেও, প্রতিবারই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে এবার সেই কাজেই হাত দিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের হাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি জমি রয়েছে, প্রায় ১৮ লক্ষ একর। সেনার তহবিল থেকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকাগুলির উন্নতিসাধনের প্রস্তাবও আগে সংসদে উঠেছিল। এই মুহূর্তে দেশে নথিভুক্ত ৬২টি ক্যান্টনমেন্ট রয়েছে। সবমিলিয়ে এই ক্যান্টনমেন্টগুলির কাছেই ১.৬১ লক্ষ একর জমি রয়েছে। সেখানকার সবকিছু ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডই পরিচালনা করে। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের পুরসভাগুলি এই দায় নিতে রাজি হবে কি না, সেই নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ পুরসভাগুলিতে এমনিতেই কর্মীর সংখ্যা কম, তহবিলে টাকাও নেই তেমন। তাই ক্যান্টনমেন্টের বসতি এলাকার দায় কেন্দ্র ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে, তা তারা মেনে নেবে না বলে আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক মহল।