কলকাতা: অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছেন। কিন্তু কানাডায় (Canada) গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বহু ভারতীয় পড়ুয়া। কারণ, সেখানকার প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির যে অফার লেটার তাঁরা নিয়ে গিয়েছেন, তা ভুয়ো। ভারতের উচিত, জলন্ধরের প্রতারক এজেন্টকে কানাডার হাতে তুলে দেওয়া। মত অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনের (Education Fraud)। 


বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা, তারপর সেখানেই চাকরি পেয়ে বসবাস। সুদূর ইউরোপই হোক বা আমেরিকা, এমন ভারতীয়দের খোঁজ মিলবে সর্বত্র। কিন্তু ইদানীং কালে কানাডায় গিয়ে ঘোরতর সমস্যায় পড়েছেন হাজারো পড়ুয়া। পড়াশোনা শেষ করে সেদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের পারমিট চাওয়া যায়। কিন্তু সেই আবেদন করতেই আচমকা অথৈ জলে পড়েছেন প্রায় ৭০০ পড়ুয়ারা।

এ দেশ থেকে কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য যে 'ভর্তির অফার লেটার' নিয়ে গিয়েছিলেন, নথি খতিয়ে দেখে তা ভুয়ো বলে জানিয়ে দিয়েছে কানাডা প্রশাসন। তাই ইতিমধ্যেই বহু পড়ুয়াকে কার্যত কানাডা থেকে নির্বাসনের নোটিসও ধরিয়েছে সেদেশের সরকার।


এ নিয়ে অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ সুমিত সেন বলেন, "পড়ুয়াদের প্রত্যেকেই এজেন্টের সাহায্য নিয়েছেন। ভারতের এটাই বড় সমস্যা। পড়ুয়ারা চার-পাঁচ বছর ধরে আছেন। এখানে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে ওঁদের। জালিয়াতির শিকার ওঁরা। ঘোর সমস্যায় পড়েছেন। কান্নাকাটি করছেন অনেকে। বাবা-মা মোটা টাকা ফি জমা করেছেন। কী করা উচিত, বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ।"

ঠিক কী ঘটেছিল? সূত্রের খবর, পাঞ্জাবের জলন্ধরের একটি সংস্থার এজেন্টের মাধ্যমে বহু পড়ুয়া কানাডায় গিয়েছিলেন ২০১৮-'১৯ সালে। সে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ফি-সহ অন্যান্য খরচ বাবদ পড়ুয়া পিছু ১৬ লক্ষ টাকা করে নিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। সূত্রের খবর, কানাডা বর্ডার সিকিওরিটি এজেন্সির নথি যাচাইয়ে ধরা পড়ে, পড়ুয়াদের অ্যাডমিশন অফার লেটার ভুয়ো।

এর পর থেকেই কানাডা ছাড়ার নোটিস পেতে শুরু করেন সেই সব ভারতীয় পড়ুয়ারা। আইনজীবী সুমিত সেনের অভিমত, প্রতারক এজেন্টকে ধরে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ভারতের উচিত কানাডার হাতে তুলে দেওয়া। তাঁর বক্তব্য, "ভারত এবং কানাডা, দুই দেশের সরকার সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে। এজেন্টের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক আলোচনা চালাচ্ছে। কানাডা সরকারের মন্ত্রীও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমার মনে হয়, দুই দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। প্রয়োজন হলে এজেন্টকে গ্রেফতার করে দুই দেশের চুক্তি অনুযাযী, কানাডার হাত তাঁকে তুলে দেওয়া উচিত। ঠিক যে ভাবে অন্য দেশ থেকে নীরব মোদি, বিজয় মালিয়া, মোহুল চোক্সিদের আনতে চাইছে ভারত।"

কিন্তু কোন পথে হবে সমস্যার সমাধান? সুমিত জানিয়েছেন, "পড়ুয়াদের অনেকেই আসছেন সাহায্য নিতে। আমার বক্তব্য, আইন বাঁচাতে পারে। আমি এরকম মামলা করছিও, জিতেওছি। কিন্তু রেহাই পাওয়া তখনই সম্ভব যদি দালত বোঝো যে পড়ুয়ারা নির্দোষ এবং না বুঝেই তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তখনই আদালত মাফ করতে পারে। কিন্তু শুধু মুখে আদালতকে বললেই তো হবে না! প্রমাণ লাগবে। যদি ভারত ওই প্রতারক এজেন্টকে ধরে এ দেশে পাঠায় এবং কানাডা সরকার উপুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে, তখনই এ দেশের আদালত এবং সরকার বুঝতে পারবে যে, পড়ুয়ারা না বুঝেই শিকার হয়েছেন প্রতারণার।"

প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৪ লক্ষ পড়ুয়া যায় কানাডায়। তাদের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশই ভারতীয় ছাত্রছাত্রী। তাঁদের একটি বড় অংশই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কী ভাবে এই জট কাটে, সেটাই এখন দেখার।


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI