নয়াদিল্লি: সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ভারতীয়দের তালিকায় একেবারে শীর্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২৪ সালের ১০০ ক্ষমতাশালী ভারতীয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। রাজনীতি, শিল্প, বিনোদন, ক্রীড়াজগৎ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতি ব্যক্তিদের নিয়ে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই একেবারে শীর্ষে রয়েছেন মোদি। (Most Powerful Indians)


১) গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন মোদি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়েও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তিনি। তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন বলে ঘোষণাও করেছেন। দলকে ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন মোদি। বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার, অযোধ্যায় রামমন্দিরের নির্মাণকে সামনে রেখে এগোচ্ছেন তিনি। যদিও বিরোধীদের দমন করতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘু নীতি নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি তাঁর সরকার। (Most Powerful Indians List)


২) তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতির পদ ছেড়ে দিলেও, দলের সবকিছু আসলে তাঁর অঙ্গুলিহেলনের উপরই নির্ভর করে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়-সহ গোটা হিন্দিবলয়ে গেরুয়া আধিপত্য কায়েমে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণের কিছু রাজ্যেও BJP-র শক্তিবৃদ্ধির নেপথ্যেও রয়েছে শাহি কৌশল। নির্বাচনের আগে দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার কথাও জানিয়েছেন শাহ। মোদির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বোঝাপড়াও ঈর্ষণীয় অনেকের কাছে।


৩) তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন BJP-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের (RSS) প্রধান মোহন ভাগবত। সঙ্ঘ পরিবারের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানও তিনি। তাঁর আমলেই সঙ্ঘের রামমন্দির নির্মাণ এবং অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। তৃতীয় দফায় BJP ফের কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সঙ্ঘের আদর্শ এবং নীতির প্রভাব আরও বাড়বে বই কমবে না।


৪) দেশের চতুর্থ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হলেন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে নজির গড়েছেন তিনি। তাঁর আমলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব –সহ একাধিক মামলায় তিনি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বছর নভেম্বর মাসে মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাঁর, তার আগে হাতে রয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন মামলাও।


৫) তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের জেরে বাকি দুনিয়া যখন রাশিয়াকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে জয়শঙ্করের বুদ্ধিই কাজ করেছিল। তৃতীয় বার কেন্দ্রে ফের BJP ক্ষমতায় ফিরলে, জয়শঙ্করের ক্ষমতা আরও বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


আরও পড়ুন: 1993 Train Bomb Blast: প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস '৯৩-এর ট্রেনে বিস্ফোরণে অভিযুক্ত আবদুল করিম টুন্ডা


৬) ষষ্ঠ ক্ষমতাশালী ভারতীয় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশেই লোকসভা আসনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ৮০। তৃতীয় বার BJP-কে ক্ষমতায় ফেরানোর গুরুদায়িত্ব অনেকাংশে যোগীরও। রামমন্দির নির্মাণের পর পরই ১০ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন যোগী, যা নির্বাচনী কৌশল হিসেবেই দেখছেন অনেকে।


৭) তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছেন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শাহের আগমন ঘটলে একধাপ নেমে যান রাজনাথ। তবে এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার অন্যতম অভিজ্ঞ রাজনীতিক তিনি। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আত্মনির্ভর করে তোলার গুরুভার তাঁর হাতেই ন্যস্ত। এমনকি আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে মীমাংসার ক্ষেত্রেও তাঁকেই এগিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র।


৮) দেশের অষ্টম ক্ষমতাশালী নাগরিক কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দেশের প্রথম পূর্ণ এবং দীর্ঘমেয়াদি মহিলা অর্থমন্ত্রী তিনি। তাঁর আমলেই দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের মাইফলক ছুঁয়েছে। তবে মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারিকরণ নিয়ে প্রশ্নে বিদ্ধ সীতারামন।


৯) তালিকায় নবম স্থানে রয়েছেন BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের সংগঠনের দায়িত্ব মূলত তাঁরই। মোদি এবং শাহের অত্যন্ত বিশ্বস্ত তিনি। সন্দেশখালিতে কমিটি পাঠানোর নেপথ্যেও ছিলেন। তবে বড়াই করার স্বভাব নেই।


১০) দেশের দশম ক্ষমতাশালী নাগরিক শিল্পপতি গৌতম আদানি। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ হাজার ১০০ কোটি ডলার। সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, বন্দর, বিমানবন্দর, গ্যাস-প্রত্যেক ক্ষেত্রে কার্যতই একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপনের দিকে এগোচ্ছেন তিনি। মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্যও পরিচিত আদানি।


উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই তালিকায় একাদশ স্থানে রয়েছেন শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি। দ্বাদশ স্থানে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূস গয়াল, ত্রয়োদশ স্থানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, চতুর্দশ স্থানে রয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। কংগ্রেস থেকে BJP-তে যোগ দিলেও, মোদি-শাহের আস্থাভাজন তিনি।


তালিকায় পঞ্চদশ স্থানে রয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লাগাতার তিন বার বিপুর জনাদেশ পেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়েছেন যেমন, তেমনই বিরোধী জোটেও তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অধুনা সন্দেশখালির ঘটনায় কিছুটা হলেও কোণঠাসা তাঁর দল। তবে নেত্রী মমতার রাজনৈতিক বিচার-বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই।


এই তালিকায় ষষ্ঠদশ স্থানে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন বার বার সমালোচনার মুখে পড়লেও, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সাফল্য মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পুনরায় জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাঁকে। মানহানি মামলার দরুণ সাংসদপদ বাতিল হওয়ার সময়ও সমবেদনা কুড়োন।


তালিকায় সপ্তদশ স্থানে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল তালিকায় অষ্টাদশ স্থানে রয়েছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ১৯ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরি তালিকায় ২০তম স্থানে রয়েছেন।


উল্লেখযোগ্য ভাবে তালিকায় ২৬তম স্থানে রয়েছেন মুকেশ-পত্নী নীতা আম্বানি, ২৭তম স্থানে রয়েছেন অভিনেতা শাহরুখ খান, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী রয়েছেন ২৯তম স্থানে, BCCI-এর সচিব জয় শাহ তালিকায় ৩৫তম স্থানে রয়েছেন, ৩৮তম স্থানে রয়েছেন তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি, ৪৬তম স্থানে রয়েছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন নীরজ চোপড়া, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক রয়েছেন ৪৭তম স্থানে, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি রয়েছেন ৫৮তম স্থানে। তালিকায় ৬২তম স্থানে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৬৮তম স্থানে রয়েছেন।


৭৩তম স্থানে রয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তথা বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব ৭৫তম স্থানে, ৭৮তম স্থানে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, ৭৯তম স্থানে আলিয়া ভট্ট, ISRO-র প্রধান এস সোমনাথ ৮৩তম স্থানে, ৮৪তম স্থানে শশী তারুর, যোগগুরু রামদেব ৮৬তম স্থানে, ৮৭তম স্থানে দীপিকা পাড়ুকোন, ৯১তম স্থানে অধীররঞ্জন চৌধুরী, ৯৩তম স্থানে হেমন্ত সোরেন, ৯৪তম স্থানে শরদ পওয়ার, ৯৫তম স্থানে উদ্ধব ঠাকরে, ৯৬তম স্থানে সদগুরু, ৯৭তম স্থানে কর্ণ জোহর, ৯৯তম স্থানে অমিতাভ বচ্চন, ১০০তম স্থানে বিনেশ ফোগাত রয়েছেন।