নয়াদিল্লি: পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় যুদ্ধ ঘনিয়ে এসেছে। সেই আবহেই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসছে। গত ৫ অক্টোবর ইরানের সেমনান প্রদেশে যে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল, তাকে ভূমিকম্প বলে মানতেই নারাজ আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ। প্রাকৃতিক ভাবে কম্পন নয়, বরং ইরান আসলে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করছিল, তার জন্যই তীব্র কম্পন অনুভূত হয় বলে দাবি উঠছে। সেই নিয়ে এবার মুখ খুলল আমেরিকা। (Iran Nuclear Weapon Test)
আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা CIA-র প্রধান উইলিয়াম বার্নস বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। গত ৫ অক্টোবর ৪.৬ তীব্রতায় ভূমিকম্পের পর থেকেই সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। ইরান প্রথম বার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করেছে বলে শুরু হয়েছিল গুঞ্জন। সেই আবহে ইরানের অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে প্রশ্ন করলে, সংবাদমাধ্যমে উইলিয়াম জানান, পরমাণু অস্ত্রক্ষমতা বৃদ্ধি করে চললেও, ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেই আপাতত পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনায় বিরতি নিয়েছেন। (Middle East War Situation)
গত এক বছর ধরে ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, সম্প্রতি তা আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করেছে। প্যালেস্তাইনের গাজা, ওয়েস্টব্যাঙ্কের পাশাপাশি, ইজরায়েল হামলা চালিয়েছে লেবানন, ইয়েমেনেও। এমন পরিস্থিতিতে ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র শয়ে শয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। জবাবি হামলা হলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়। ইজরায়েল যদিও সাফ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট জায়গায় ইরানের হামলার জবাব দেবে তারা। ইজরায়েল এবং আমেরিকা মিলে ইরানের পরমাণু অস্ত্র গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালাতে পারে বলেও জল্পনা।
সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই, গত ৫ অক্টোবর তীব্র কম্পন অনুভূত হয় ইরানের সেমনান প্রদেশে। আমেরিকার সেমনান প্রদেশের আরাদানকে কম্পনের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে। মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরতা থেকে কম্পন ছড়ায় বলে জানানো হয়। কম্পন অনুভূত হয় সেমনান থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইরানের রাজধানী তেহরানেও। প্রথম বার কম্পনের পর, কয়েক মিনিটে দ্বিতীয় কম্পনও অনুভূত হয়। পর পর কম্পনের পর তার কারণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। মাটির নীচে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করাতেই কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে অভিযোগ সামনে আসে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটির নীচে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলে মাটি কেঁপে উঠতে পারে। কিন্তু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণা কেন্দ্রগুলি মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত। সেক্ষেত্রে ১০ কিলোমিটার গভীরতা থেকে কম্পন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মিলছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার ফলে সৃষ্ট কম্পন এবং ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পনের মধ্যে পার্থক্য আছে বলে মত তাঁদের।
ইরানের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে জল্পনা আজকের নয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই নিয়ে বিবৃতিও প্রকাশ করে আমেরিকা এবং তাদের সহযোগী ইউরোপীয় দেশগুলি। বলা হয়, ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে ইরান, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই মাত্রা ৯০ শতাংশে পৌঁছে গেলেই, তা অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হবে, যার থেকে মাত্র এককদম দূরে রয়েছে ইরান।
ইরান যদিও সামরিক ক্ষেত্রে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম এক সপ্তাহেই উৎপন্ন করতে পারে ইরান। ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। প্রথমে খাতায়-কলমে হিসেব, বাস্তবে তার প্রয়োগ, বিভিন্ন উপাদানগুলি পরীক্ষা করে দেখতে হয়। বর্তমানে ১২টি পরমাণু শক্তিসম্পন্ন ওয়ারহেড তৈরি করতে পাঁচ মাস সময় নেয় ইরান।