কলকাতা: হাইকোর্টে  নারদ-মামলার শুনানি চলছে।  ৪ হেভিওয়েট ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জামিন-স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনা আর্জির শুনানি চলছে। দুপুর দুটো থেকে শুনানি চলছে। শুনানিতে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,  ‘জামিন হবে কি হবে না আমরা কেন সিদ্ধান্ত নেব? ‘শুধুমাত্র মানুষের চাপের অভিযোগ ছিল বলে স্থগিতাদেশ দিয়েছি।’


সিবিআইয়ের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এরকম হয়নি’।


তুষার মেহতার উদ্দেশে প্রশ্ন বিচারপতির,  ‘চার্জশিট পেশ করা হয়ে গিয়েছে। এই ৪ জনকে আগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এঁরা অসহযোগিতা করেছেন এমন কোনও উদাহরণ আছে? এই করোনাকালে এঁদের শুধুশুধু জেলে রাখার প্রয়োজন আছে কি?’


সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন,  ‘অভিযুক্তরা জেলে নেই, তাঁরা হাসপাতালে আছেন। এই আদালত সিবিআইকে নিয়োগ করেছিল।  তাঁদেরকেই কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাতে ন্যায্য বিচার না হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।‘


অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করে অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ‘অভিযুক্তদের না জানিয়ে আদালতে মামলা হচ্ছে।  তখন তাঁদের ন্যায় বিচারের কথা মনে ছিল না?’


অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি,  ‘ছলে-বলে-কৌশলে তাঁরা এই চারজনকে জেলে ঢোকাতে চাইছে।’


 সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন,  ‘নিজাম প্যালেস ঘেরাও হয়েছে, জোর করে ভেতরে ঢুকতে চেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঢুকে তাকে গ্রেফতারের কথা বলেছেন।  নিঃশর্তভাবে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এটা পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। সিবিআই অফিসারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হয়েছে।  ৪ জনের মেডিক্যাল করানো যায়নি।


শারীরিকভাবে বিচারকের সামনে পেশ করা যায়নি। আইনমন্ত্রী নিজে সারাদিন নিম্ন আদালতে উপস্থিত ছিলেন বহু মানুষকে নিয়ে। এতে বিচারকের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কেস ডায়েরি পেশ করতে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের বাধা দেওয়া হয়েছে’‘তদন্তকারীদের ওপর চাপ তৈরির কৌশল নেওয়া হয়েছে।’


তুষার মেহেতা আরও বলেন, ‘পুনর্বিবেচনার আবেদনপত্রের কপি আমরা আজ সকালে পেয়েছি।আমাকে উত্তর দেওয়ার সময় দেওয়া হোক।’


আদালতে সওয়ালে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন,  ‘মুখ্যমন্ত্রী এবং বাকি বিধায়করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদ করেছেন।  তাঁরা কোনও অশান্তি করেননি।’


তিনি বলেন,  ‘২০১১ থেকে এনারা মন্ত্রী-বিধায়ক, মাটির সঙ্গে সম্পর্ক। এত পুরনো মামলায় হঠাৎ করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মানুষ সুবিচার পাচ্ছে না বলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার।   সিবিআই পুরো সত্যি না বলেই মামলা করছে। অশ্বত্থামা হত ইতি.....কী হচ্ছে এটা ?’


অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের,  ‘সোমবার নিজাম প্যালেসের বাইরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি,  মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে বলবেন ?  আইনমন্ত্রীর আদালতে অবস্থান নিয়ে কী বলবেন ?’


সিঙ্ঘভি বলেন,  ‘পুরোটাই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ।  কাউকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। বিচারব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করা হয়নি।’


 ‘যখন মামলার শুনানি চলছে তখন আইনমন্ত্রী কেন গেছেন ?’,অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের।


সিঙ্ঘভি বলেন, ‘এই মহামারীর সময় আদালত পর্যন্ত বলেছে... ‘গুরুতর অপরাধ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে।  আর সিবিআই এভাবে গ্রেফতার করছে।’


তিনি বলেন, ‘সলমন খান, সঞ্জয় দত্তের মামলাও আদালতে হয়েছে। ‘তাঁরা হেভিওয়েট বলে তো আদালত প্রভাবিত হয়নি।’


কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সওয়ালে বলেন ‘মন্ত্রী আদালত কক্ষে ছিলেন না।’


অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির উদ্দেশে প্রশ্ন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের,  ‘মুখ্যমন্ত্রী কি সিবিআই অফিসে ছিলেন ?’


সিঙ্ঘভি তাঁর সওয়ালে বলেন,  ‘মুখ্যমন্ত্রী এবং বাকি বিধায়করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদ করেছেন। তাঁরা কোনও অশান্তি করেননি।


 


‘মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ সময় উপস্থিতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন ?’ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে প্রশ্ন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের।


‘সিবিআই পুরো বলছে না। ববি হাকিম নিজে গ্রেফতার হওয়ার সময় কর্মীদের শান্ত থাকার কথা বলেছেন।আমার কাছে ভিডিও আছে।’


এরপর আজকের মতো শুনানি শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী শুনানি আগামীকাল দুপুর দুটোয়।