নয়াদিল্লি: এখনও পর্যন্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়নি। তার আগেই তাঁর স্মৃতিসৌধ তৈরি নিয়ে বিতর্ক বাধল। মনমোহনের স্মৃতিসৌধের জন্য আবেদন জানানো হলেও, কেন্দ্রীয় সরকার আবেদনে সায় দেয়নি বলে শুক্রবার জানায় কংগ্রেস। সেই নিয়ে দিনভর রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলে। শেষ পর্যন্ত রাতে বিবৃতি প্রকাশ করে কেন্দ্র জানায়, কংগ্রেসের আবেদন মেনে নেওয়া হয়েছে। (Manmohan Singh Funeral)
শুক্রবার মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, "প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য আজ সকালে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের কাছ থেকে অনুরোধ এসেছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ খড়গে এবং মনমোহন সিংহের পরিবারকে জানিয়ে দেন যে, স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য জায়গা দেওয়া হবে। আপাতত শেষকৃত্য এবং অন্যান্য নিয়মকানুন সম্পূর্ণ করা যেতে পারে। কারণ কমিটি তৈরি করতে হবে, বরাদ্দ করতে হবে জায়গা।" (Manmohan Singh Dies)
কংগ্রেসের দাবি ছিল, মনমোহনের শেষকৃত্য এমন জায়গায় হোক, যেখানে তাঁর সম্মানে স্মৃতিসৌধও গড়ে তোলা সম্ভব। সেই নিয়ে দিনভর টানাপোড়েন চলে শুক্রবার। বিজেপি-র যুক্তি ছিল, UPA জমানায় মনমোহন যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, পৃথক অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার দাবির বিরোধিতা করেছিল তারা। ২০১৩ সালে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সকলের জন্য একটি জায়গাকেই শেষকৃত্যস্থল হিসেবে বেছে নেয়, রাজঘাটের রাষ্ট্রীয় স্মৃতিস্থল।
যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া চিঠিতে খড়গে মনমোহনের অবদান এবং তাঁর কৃতিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তাঁর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার কথাও লেখেন। খড়গে লেখেন, "আমার আশা এবং বিশ্বাস যে, মনমোহনের জন্য উপযুক্ত স্থান পাওয়া যাবে, যেখানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যাবে।" কিন্তু সন্ধে পর্যন্ত সরকারের তরফে তাতে অনুমোদন মেলেনি বরং নিগমবোধ ঘাটেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, "একটা সহজ কথা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না, ওঁর (মনমোহন সিংহের) মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শেষকৃত্যস্থল, যেখানে তাঁর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যায়, এমন একটা জায়গাও কেন খুঁজে পাচ্ছে না কেন্দ্র। এটা আর কিছুই নয়, দেশের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রীর অবমাননা।" এক এক করে কংগ্রেসেরে অনেকেই মুখ খোলেন। শিরোমণি অকালি দল, সমাজবাদী পার্টি এবং আম আদমি পার্টিও কংগ্রেসের সমর্থনে এগিয়ে আসে। কেন রাজঘাটে মনমোহনের শেষকৃত্য করতে দেওয়া হচ্ছে না, প্রশ্ন ওঠে।
এর পাল্টা কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করে বিজেপি। দলের মুখপাত্র সিআর কেশবন বলেন, "কংগ্রেস সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছেন, সংস্কৃতির কথা বলছেন, স্মৃতিসৌধ তৈরির কথা বলছেন। ওঁকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের জন্য কোনও স্মৃতিসৌধ তৈরি করেনি। ২০০৪ সালে মারা যান উনি। ২০০৪ থেকে ২০১৪, ১০ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেস স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেনি নরসিংহ রাওয়ের জন্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই ২০১৫ সালে নরসিংহ রাওয়ের স্মৃতিসৌধ তৈরি করেন। ২০২৪ সালে মরণোত্তর ভারতর্তন সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।"
সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব জাবিয়েছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের শেষকৃত্যের ক্ষেত্রে ঐতিহ্য বজায় থাকা উচিত। প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত সকলকে। মনমোহন সিংহের শেষকৃত্য নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। অখিলেশ জানান, বিজেপি-র উচিত সঙ্কীর্ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা। এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ইতিহাস বিজেপি-কে ক্ষমা করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত রাতে কেন্দ্রের তরফে বিবৃতি দিয়ে কংগ্রেসের আবেদন মেনে নেওয়ার কথা জানানো হয়।
তবে রাজঘাট নয়, শনিবার সকাল ১১টা বেজে ৪৫ মিনিটে দিল্লির নিগমবোধ ঘাটে মনমোহনের শেষকৃত্য হবে। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট নাগরিকদের শেষকৃত্য সাধারণত রাজঘাটেই সম্পন্ন হয়। তাই রাজঘাটের পরিবর্তে নিগমবোধ ঘাটে কেন মনমোহনের শেষকৃত্য করার সিদ্ধান্ত, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শিরোমণি অকালি দলের সুখবীর সিংহ বাদল সেই নিয়ে মোদির হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। তাঁর মতে, দেশের সম্মানীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য রাজঘাটেই হওয়া উচিত, বরাবর যা হয়ে এসেছে। কেন মনমোহনকে এভাবে অপমান করা হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন তিনিও। তবে শনিবার সকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করেনি কেন্দ্র।