নয়াদিল্লি: জনতা দল, কংগ্রেস হয়ে গেরুয়া শিবিরে এসে উঠেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও থেকেছেন একসময়। তবে বাংলার রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েই রাজনৈতিক কর্মজীবনে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। বাংলায় ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন যত, ততই বেশি করে বিজেপি-র এজেন্ট তকমা গায়ে সেঁটে যায় তাঁর নামের পাশে। তত বেশি করে বিজেপি-র প্রতিনিধি তকমা জড়িয়ে  গিয়েছিল তাঁর নামের সঙ্গে। বিজেপি প্রার্থী হিসেবেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জগদীপ ধনকড়- (Jagdeep Dhankhar)। বুধবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে ভাল কাজ করাতেই আজ উপরাষ্ট্রপতি পদে, সংসদে এমন প্রশংসাও পেলেন ধনকড়।


উপরাষ্ট্রপতি হয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন জগদীপ ধনকড়


বুধবার থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হল। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তাই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বর্তেছে ধনকড়ের কাঁধে। এ দিন সভার সূচনা-বক্তৃতায় তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন মোদি। তিনি বলেন, “রাজ্যসভার সব সাংসদ, গোটা দেশের তরফে আপনাকে অভিনন্দন। সাধারণ পরিবারের ছেলে, সংঘর্ষ করে জীবনে এতদূর এসেছেন। সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে হয়ে আজ আপনি যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, তা বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। সৈনিক স্কুলের ছাত্রও ছিলেন। আপনার মধ্যে কৃষক এবং জওয়ান, দুই-ই সমাহিত।“


আরও পড়ুন: MCD Polls: কৌশলেই প্রতিপক্ষকে মাত কেজরীর, ১৫ বছর পর বিজেপি-র হাতছাড়া দিল্লি পৌরসভা


এ দিন সংসদে সব দলের প্রতিনিধিরাই ধনকড়কে অভিনন্দন জানান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও। আর সেখানেই ধনকড়ের বাংলায় ধনকড়ের কার্যকালের প্রশংসা করেন কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রী রামদাস আঠওয়ালে (Ramdas Athawale)। কিন্তু যে ভঙ্গিমায় তিনি ধনকড়ের প্রশংসা করেন, তার ভিতর সূক্ষ্ম রসিকতাও মিশে ছিল।   এ দিন আঠওয়ালে বলেন, “আপনার অভিজ্ঞতার পরিধি সুবিশাল। আমি আপনার শিষ্য। একা ছাড়বেন না আমাকে। গর্বভরে উপরাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন আপনি। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, পরিস্থিতি দুষ্কর হওয়া সত্ত্বেও, বাংলায় রাজ্যপাল হিসেবে এত ভাল কাজ করেছেন। বাংলায় এত ভাল কাজ করেছেন বলেই আপনাকে এখানে আনার এত প্রচেষ্টা হয়। আপনি সংঘর্ষ করতে জানেন। ওখানে ভাল কাজ না করলে হয়ত পদ পেতেন না।”


রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি রামদাস। ২০১১ সালে বিজেপি-র সঙ্গে জোট করেন। তিনি এই মুহূর্তে কেন্দ্রের মন্ত্রী। সংসদে বরাবরই নিজের ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্যের জন্য পরিচিত। তাঁর মুখে ধনকড়ের উদ্দেশে প্রশংসামূলক বাক্য ঝরে পড়তে হেসে ওঠেন বিজেপি-র সাংসদরাও।  প্রধানমন্ত্রী মোদি, তৃণমূল এবং বিজেপি সাংসদদের সামনে তাঁর আজকের এই মন্তব্য় ঘিরেও শুরু হয়েছে আলোচনা। কারণ বাংলায় ধনকড়ের কার্যকাল আগাগোড়াই বিতর্কিত থেকেছে। সাংবিধানিক পদে থেকে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ‘বিজেপি-র এজেন্ট’ বলে কটাক্ষও করেন। এমনকি তাঁকে অপসারণের দাবিও জানান।


প্রশংসা না রসিকতা! আঠওয়ালের মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা


কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি পদে ধনকড়ের নাম সামনে আসতেই, সেই তৃণমূল সংসদে ধনকড়ের পক্ষে ভোট দেয়। এর পিছনে রাজনৈতিক কৌশলই কাজ করেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, যে ভাবে প্রতি পদে কাজে বাগড়া দিচ্ছিলেন ধনকড়, তাতে তাঁকে বাংলা থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তৃণমূল। তাই উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নাম উঠে আসতেই বিরোধী শিবিরের প্রার্থীর পরিবর্তে ধনকড়কে উপরাষ্ট্রপতি করে বাংলা থেকে সরাতে উদ্যত হয় তারা। এমনকি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গে আলাদা করে ধনকড় এবং অসমের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে বৈঠকও করেন মমতা। সেখানেই সব ঠিক হয়ে যায় বলে সেই সময় দাবি করে সিপিএম-কংগ্রেসও। ধনকড়কে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদে স্বাগত জানিয়ে এ দিন রামদাস সেই সংঘাতপর্বেরই উল্লেখ করেছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।