ভুবনেশ্বরের ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সাম হসপিটালের আইসিইউ-তে সোমবার সন্ধে সাতটা নাগাদ আগুন লাগে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডায়ালিসিস এবং মেডিসিন ওয়ার্ডে। চারিদিক কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়।
আগুনের থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়ায় আতঙ্ক। শুরু হয়ে যায় ব্যাপক হুড়োহুড়ি। রোগীদের কয়েকজনকে কোনওক্রমে বাইরে আনা হয়। কিন্তু, তখনও অনেকে আটকে ছিলেন আইসিইউতে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়। যদিও, বেসরকারি মতে, মৃতের সংখ্যা ২২।
ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলবাহিনী। পুলিশ, দমকল বাহিনী একসঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ল্যাডার এনে জানালার কাচ ভেঙে বাইরে বের করে আনা হয় রোগীদের। হাসপাতালের কর্মীরা এবং আশেপাশের লোকজন উদ্ধারকাজে হাত লাগায়।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আইসিইউ বিভাগ ও ডায়ালিসিস রুম। সেখান থেকে প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়। সমস্ত রোগীকে বের করে এনে বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রায় ৫০০ জন রোগী আগুনে আটকে পড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার সন্ধেয় বছর ছাব্বিশের রোগী বাইনা বেহরার ডায়ালিসিসের প্রস্তুতি চলছিল হাসপাতালে। বাইনার দাবি, হঠাৎই তিনি ইলেকট্রিকের প্যানেল বক্সের দিক থেকে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন। চোখের নিমেষে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ অবশ্য, এসি মেশিনে শর্ট সার্কিট থেকে বা ডায়ালিসিসের যন্ত্র গরম হয়ে, আগুন লাগার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। ডায়ালিসিস রুমের পাশেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট। কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে সেই ঘরে। বিষাক্ত কার্বন মনো অক্সাইডে দম আটকে বহু রোগীর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সালে ফায়ার সেফটি অডিটে এই হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় প্রচুর খামতি ধরা পড়ে। হাসপাতালকে নোটিসও ধরানো হয়।
রোগীদের পরিবারের দাবি, হাসপাতালে সিঁড়ি ও লিফট থাকলেও কোনও RAMP নেই। ফলে বিপদ বুঝেও বহু রোগীকে বার করা যায়নি। যদিও, এই হাসপাতাল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, সেখানকার আধিকারিকরা এখনও গাফিলতি মানতে নারাজ।
ওড়িশার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অতনু সব্যসাচী নায়েক জানিয়েছেন, রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের পার্শ্ববর্তী আমরি হাসপাতাল, অ্যাপোলো হাসপাতাল, কলিঙ্গ হাসপাতাল, কটকে এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ প্রভৃতি বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এতজন মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতালের চার কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ফায়ার অফিসার, ২ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন হাসপাতালের ম্যানেজার। ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করে নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।
টুইটারে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি বলেন, আহতদের দ্রুত এইমস্-এ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি তাঁরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
দমকলের ডিজি বিনয় বেহরা জানিয়েছেন, তাঁদের অনুমান শর্ট সার্কিট থেকেই লেগেছে আগুন। তবে প্রকৃত কারণ কী, তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি তাঁরা। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এদিন ভুবনেশ্বরের সাম হাসপাতালে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এই ঘটনায় দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। উভয়ক্ষেত্রেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে।