চেন্নাই ও নয়াদিল্লি: ঘূর্ণিঝড় ‘ভরদা’-য় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২০। সাইক্লোনের প্রকোপে পড়া ২ রাজ্যে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যের ওপর নজর রেখেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
ঘূর্ণিঝড় ‘ভরদা’-র তাণ্ডবের পর ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে তামিলনাড়ু। গতকাল ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এদিন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮। অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশে মারা গিয়েছেন ২ জন।
তামিলনাড়ুর এক শীর্ষ কর্তা জানান, চেন্নাই ও তিরুভাল্লুরে পাঁচজন করে মারা গিয়েছেন। কাঞ্চীপূরমে চারজন মারা গিয়েছেন, তিরুবন্নামালিতে মারা গিয়েছেন ২ জন এবং নাগাপট্টিনাম ও বিল্লুপুরমে মারা গিয়েছেন একজন করে। অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরে মারা গিয়েছেন ২ জন।
উপকূলবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, চেন্নাই শহরজুড়ে এখনও ধ্বংসের ছবি। উপড়ে পড়েছে বহু গাছ। বন্ধ রাস্তা। লন্ডভন্ড বাড়িঘর। রাস্তায় পড়ে বড় বড় বিলবোর্ড।
এখনও বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন। নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন। তবে বৃষ্টি কমেছে। সকাল থেকে ফের শুরু হয়েছে বিমান চলাচল। দু'-একটি করে ট্রেন ও বাস চলাচল করছে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এদিন শীর্ষে পর্যায়ের বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভম। ঝড়-বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলিকে স্বাভাবিক করার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। বিশেষ করে, জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগকে ঠিক করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তামিলনাড়ুতে তাণ্ডব চালানোর পরে অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে ভরদা এগোচ্ছে কর্নাটকের দিকে। সে রাজ্যেও জারি হয়েছে সতর্কতা। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার পর শক্তিক্ষয় হয়েছে ‘ভরদা’-র। কর্ণাটকে তার ক্ষমতা অনেকটাই কম হবে বলে মনে করছেন আবহবিদরা।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘ভরদা’-র ওপর নজর রেখে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। এদিন শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহঋষি, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তা সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিভিন্ন পদাধিকারীরা।
এনডিআরএফ ডিজি আর কে পচনন্দা জানান, ২৬৮ জন বিশিষ্ট ৮টি উদ্ধারকারী দল ২৯টি নৌকো নিয়ে তামিলনাড়ুতে রয়েছে। পাশাপাশি, ১০৮ জন কে নিয়ে এনডিআরএফ-এর আরও তিনটি দল ১৫টি নৌকো নিয়ে চেন্নাইতে মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়া, ২০৫ জন বিশিষ্ট ৬টি দল অন্ধ্রপ্রদেশে মোতায়েন রয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ২০টি নৌকো। জানা গিয়েছে, এদিন সকাল থেকেই চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে বিমানের ওঠানামা শুরু হয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কাজে প্রশংসা করেন রাজনাথ।
কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে ১৩,৫৭৮ জনকে নিরাপদে সরানো হয়েছে। ঘর ভেঙেছে ৫৫টি, গাছ পড়েছে ৯,১৫৪টি, বৈদ্যুতিন বাতিস্তম্ভ উপড়েছে ৫২০০, ৭১টি ট্রান্সফর্মারের ক্ষতি হয়েছে এবং ৩১২ রাস্তা আটকে গিয়েছে।
অন্যদিকে, অন্ধ্রে প্রায় ১১ হাজার মানুষকে শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ৩৯১ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২টি গাছ পড়েছে।