নয়ডা: সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্টে লাইক করলেই মিলবে টাকা। এই টোপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠকিয়ে ৩,৭০০ কোটি টাকার প্রতারণার ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অভিযুক্ত সংস্থা সোশ্যাল ট্রেডডটবিজ সাইটের ম্যানেজার অভিনব মিত্তাল এবং তার দুই শাগরেদ শ্রীধর প্রসাদ ও মহেশ দয়ালের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। নয়ডা, গাজিয়াবাদ, কানপুরে এই তল্লাশিতে অপরাধের প্রমাণ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার মামলা দায়ের হয়েছে। অভিনবর স্ত্রী আয়ুষীর বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়েছে।


অনলাইন ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে ৩,৭০০ টাকা প্রতারণার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স এ মাসের ২ তারিখ অভিনব, শ্রীধর ও মহেশকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিও সিজ করে দেওয়া হয়েছে।। ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে ৫০০ কোটি টাকা রয়েছে বলে জানান টাস্ক ফোর্সের এএসপি অমিত পাঠক। তিনি বলেছেন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের টোপে অভিযুক্তরা লোকজনকে ফাঁদে ফেলত এবং তাদের ভুয়ো প্রকল্পে প্রায় সাত লক্ষ লোকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে।

অভিযুক্তরা একটি পোর্টাল চালাত। এর সদস্য হওয়ার জন্য  কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫,৭৫০ থেকে ৫৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করত হত। এর বদলে প্রতারকরা সদস্যদের প্রতি ক্লিকের জন্য ঘরে বসে পাঁচ টাকা উপার্জনের প্রতিশ্রুতি দিত।
অ্যাব্লেজ ইনফো সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড নামে নয়ডায় রেজিস্টার্ড ওই কোম্পানি পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য তাদের পোর্টালের নাম কিছুদিন অন্তরই পাল্টে ফেলত। এখনও পর্যন্ত তারা সাড়ে ছয় লক্ষ লোককে তাদের শিকার বানিয়ে প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে বলে জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ এসটিএফের পুলিশ সুপার ত্রিবেণী সিংহ।
এই প্রতারক চক্রের মূল পাণ্ডা অভিনব গাজিয়াবাদের বাসিন্দা। তার বি টেক ডিগ্রি রয়েছে। শ্রীধর বিশাখাপত্তনম ও মহেশ মথুরার বাসিন্দা। ২০১৫-তে চালু হয়েছিল ওই পোর্টাল। লগ্নিকারীদের আয়ের জন্য তারা চারটি পৃথক প্যাকেজ দিত। ওই প্যাকেজ অনুযায়ী কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিলে লগ্নিকারীদের বিভিন্ন পেজ লাইক করতে এবং বিভিন্ন লিঙ্কে ক্লিক করতে হত। ওই পেজ ও লিঙ্কগুলি কোম্পানিই পাঠাত।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, কোম্পানি দাবি করত যে তারা প্রতি ক্লিক থেকে ৬ টাকা পায়। এরমধ্যে পাঁচ টাকাই তারা লগ্নিকারীদের দেয়। যদিও যে লিঙ্কগুলি পাঠানো হত, সেগুলো ভুয়ো।
প্রতিশ্রুতি মতো টাকা না পেয়ে কয়েকজন লগ্নিকারী নয়ডা ফেজ ৩ ও গ্রেটার নয়ডার সুরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরই ভিত্তিতে পুলিশ প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস করে। বিষয়টি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আয়কর বিভাগ এবং সেবি-কেও জানিয়েছে টাস্ক ফোর্স।